প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপমুখী অনেক বাংলাদেশি নাগরিক নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে যাত্রা শুরু করেন, যাদের একটি বড় অংশ অবৈধ পন্থায় পাড়ি জমাতে গিয়ে আটকা পড়েন বিভিন্ন দেশে। আফ্রিকার উত্তর উপকূলে অবস্থিত লিবিয়া এমন একটি গন্তব্য, যেখানে বহু বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে অসহনীয় দুর্দশায় দিন কাটান। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আটকে পড়া এসব প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, অবশেষে এক মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে আটক অবস্থায় ছিলেন এই ১৫৮ জন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় এবং লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের অব্যাহত প্রচেষ্টায়।
জানা গেছে, সোমবার (১৬ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ত্রিপলির মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আইওএম-এর ভাড়া করা বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট (নম্বর: UZ222) ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে আটক এসব বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিতভাবে লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়। মানবিক দিক বিবেচনায় এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করে আইওএম।
উল্লেখ্য, মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেক বাংলাদেশি তরুণ-যুবা লিবিয়ায় আটকে যান, যাদের থেকে মুক্তিপণের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। অনেকে নির্যাতনের শিকার হন, আবার কেউ কেউ সেখানে দীর্ঘদিন আটকে থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এই ধরনের সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় একাধিক ধাপে দেশে প্রত্যাবাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, এই ধরনের মানবিক প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুধু নাগরিকদের জীবন রক্ষা করছে না, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও মানবিক অবস্থানকেও সুদৃঢ় করছে। ভবিষ্যতেও লিবিয়াসহ অন্যান্য দেশে আটক ও বিপদাপন্ন বাংলাদেশিদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা।