প্রকাশ: ১৭ই জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে আজ এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে একের পর এক ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের সামরিক সংঘাত হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি-৭ সম্মেলন অসমাপ্ত রেখে হঠাৎ করেই ওয়াশিংটন ফিরে গেছেন, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে ইরানের রাজধানী তেহরানের সকল নাগরিককে শহর ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই অপ্রত্যাশিত ঘোষণা আসে ঠিক সেই সময়ে যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা ইসরায়েলের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে, যা তেল আবিবকে মার্কিন সহায়তার জন্য আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করতে বাধ্য করছে।
ইরানের পক্ষ থেকে আসা কিছু চাঞ্চল্যকর পদক্ষেপ এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশটি তার যাদুঘরগুলো থেকে মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সরিয়ে নিচ্ছে, যা সাধারণত যুদ্ধের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আজ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি আবেগঘন ভাষণ দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, “আমার শরীরের কোনো মূল্য নেই, আমার জীবনের কোনো গুরুত্ব নেই। এমনকি তারা আমাকে হত্যা করলেও, এটাকে আমাদের ক্ষতি মনে করো না, যতক্ষণ তোমরা নীতির প্রতি অটল থাকবে।”
মার্কিন কংগ্রেসে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স “নো ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট” নামে একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধা দেবে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা স্বরক্ষামূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চীন ইসরায়েলে অবস্থানরত তার নাগরিকদের দ্রুত দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে, বিশেষ করে জর্ডানের মাধ্যমে স্থলপথে নিরাপদে বেরিয়ে আসার সুপারিশ করেছে। চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে বর্তমান পরিস্থিতিকে “অত্যন্ত খারাপ এবং জটিল” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইরানের ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) হিব্রু ভাষায় একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েলের সকল নাগরিককে দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “দখলকৃত অঞ্চলে অবস্থিত যেকোনো শহর, স্থাপনা বা কেন্দ্র বৈধ সামরিক লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।”
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে, তাহলে ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হবে। এই অবস্থায় ইরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অব্যাহত রাখতে পারবে, যা ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হাইফা শহরে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, যা তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গোপন রাখার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ইরানের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত ও কষ্ট সহ্য করার অভিজ্ঞতা রাখে। বিংশ শতাব্দীতে টানা দশ বছর ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। অন্যদিকে, গত দুই দশকে ইসরায়েল একচেটিয়াভাবে আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শন করে আসছিল, যা এখন প্রথমবারের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
এই সংঘাত মাত্র চার দিন আগে শুরু হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোই নির্ধারণ করবে ইসরায়েল এই যুদ্ধ একা চালিয়ে যাবে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করবে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে না পারলে ইসরায়েলকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হতে পারে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে নিজ নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এই সংঘাত যেন আরও বিস্তৃত না হয় সেদিকে নজর রাখা।
এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, সরকারি বিবৃতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত বিবেচনা করা হয়েছে। এটি একটি নিরপেক্ষ ও পেশাদার সংবাদ উপস্থাপনার অংশ হিসেবে প্রকাশিত হলো।