সর্বশেষ :
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সামরিক কারখানায় ‘সাইবার হামলা’, ৬ টেরাবাইট তথ্য চুরি করল হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ‘ভাই এডিট করে ছবি দে সমস্যা নাই, জাতের কারও দে’—শবনম ফারিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বার্তা আইইএলটিএসে মাত্র ৭ স্কোর করলেই সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ চাল-সবজির বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দাম, মুরগি-ডিমে সামান্য শিথিলতা আবার প্রাণ ফিরে পেল রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্র: স্থানীয় শিক্ষক পুনর্বহালের আশ্বাসে আশায় আশ্রয়শিবির স্টোকসের সন্দেহ, জাদেজার ব্যাটিংয়ের ফাঁকে পিচ নষ্টের চেষ্টা! কী বলছেন জাদেজা নিজে? নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রধান শর্ত: ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ ইতিহাসে স্থান পাবে, রাজনীতিতে নয়”: জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. রিপনের ঘোষণা ব্যাংকক বিমানবন্দরে অন্তর্বাসে পাইথন লুকিয়ে প্রাণী পাচারের চেষ্টা, পুরোনো অপরাধী আবারও ধরা আর যেন কোনো স্বৈরাচারী শাসন গড়ে না উঠতে পারে, সেজন্য সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে: নাহিদ

নীরবতা ভেঙে আবার সচল রাজস্ব ভবন: এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার, কর্মকর্তারা কাজে ফিরলেন

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ৩ বার
নীরবতা ভেঙে আবার সচল রাজস্ব ভবন: এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার, কর্মকর্তারা কাজে ফিরলেন

প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন

দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অসন্তোষ, কর্মবিরতি এবং সর্বশেষ শাটডাউন কর্মসূচির পর অবশেষে কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার সকাল ৯টা থেকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন কর, শুল্ক ও ভ্যাট অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। অর্থবছরের শেষ দিনে রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গেছে কর প্রশাসনকে।

বহুল আলোচিত এই আন্দোলন, যা মূলত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছিল, দেশব্যাপী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে গত শনিবার ও রোববারের শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের প্রধান বন্দরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এর ফলে সরকার, ব্যবসায়ী সমাজ এবং সাধারণ জনগণ সবাই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে পড়ে।

এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, “সকাল থেকেই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। সব দপ্তরে উপস্থিতি সন্তোষজনক। কাস্টমস হাউজ, আইসিডি, কর ও ভ্যাট অফিসগুলোতে কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করছেন। যেহেতু আজ অর্থবছরের শেষ দিন, তাই আমরা পাইপলাইনে থাকা রেভিনিউগুলো ট্রেজারিতে আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

রাজস্ব ভবনে ফিরে আসা এই কর্মচাঞ্চল্য অবশ্য পুরোপুরি নিরবচ্ছিন্ন নয়। আন্দোলনের ছায়া এখনো রয়ে গেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা আমাদের ডেস্কে ফিরে এসেছি, নিয়মিত কাজ করছি। তবে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়েও সহকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।”

চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ ও আখাউড়াসহ দেশের সব প্রধান স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতেও আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

এই আন্দোলনের মূলে রয়েছে এনবিআর পুনর্গঠনের সরকারি উদ্যোগ, যার আওতায় গত ১২ মে সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে। সরকারের যুক্তি ছিল—নীতিনির্ধারণ এবং রাজস্ব আহরণের কাজ পৃথক করাই এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য।

তবে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে, এই পরিবর্তন প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করবে। তারা দাবি করেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মতো টেকনিক্যাল খাতে অর্থ ও রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগে অগ্রাধিকার থাকা উচিত। এছাড়া, বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণের দাবিও ছিল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি।

সোমবার সকালের আগে পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত জটিল। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, বিশেষ করে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ, গত দুই দিনে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালায়। রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন তারা। এরপর আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে সরকারও আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নেয়। এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এবং এনবিআরের কর্মক্ষেত্রকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে, আইনগতভাবে কর্মবিরতি বা ধর্মঘটের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়ে।

আন্দোলন প্রত্যাহারের পরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশেষ করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে থাকা অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলির আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের এক প্রধান চালিকাশক্তি। চলতি অর্থবছরের শেষ দিনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসা নিঃসন্দেহে দেশের রাজস্ব ও ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। তবে এই সংকটের পেছনে যে গভীর কাঠামোগত অসংগতি রয়েছে, তার সমাধান না হলে অদূর ভবিষ্যতে আবারও এমন অচলাবস্থার ঝুঁকি থেকে যায়।

এখন সময় এসেছে সরকার, রাজস্ব প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে একটি টেকসই সমঝোতায় পৌঁছানোর, যেন ভবিষ্যতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ওপর রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক টানাপোড়েনের ছায়া না পড়ে। এই মুহূর্তে শুধু কাজ শুরু করাই নয়, আস্থার ভিত্তিও পুনর্গঠন করতে হবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যুক্ত প্রতিটি মানুষকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া