প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসে এক নতুন পালক যুক্ত করলেন ভারতের প্রখ্যাত গায়ক অরিজিৎ সিং। আধুনিক সংগীতপ্রেমীদের কাছে ‘ভয়েস অফ ইমোশন’ নামে খ্যাত এই শিল্পী এবার ছাপিয়ে গেলেন টেলর সুইফট, এড শিরান, বিলি আইলিশের মতো বিশ্বজুড়ে পরিচিত তারকাদের।
গ্লোবাল মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাই-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত অরিজিৎ সিংয়ের অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫১ মিলিয়নে, যা তাকে এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার থাকা সংগীতশিল্পী হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।
বিশ্ববিখ্যাত এই প্ল্যাটফর্মে টেলর সুইফটের অনুসারীর সংখ্যা যেখানে ১৩৯ মিলিয়ন, সেখানে এড শিরান রয়েছেন ১২১ মিলিয়ন অনুসারী নিয়ে। বিলি আইলিশের অনুসারী সংখ্যা ১১৪ মিলিয়ন, দ্য উইকেন্ড ১০৭.২ মিলিয়ন, আরিয়ানা গ্রান্দে ১০৫.৮ মিলিয়ন, এমিনেম ১০১.৭ মিলিয়ন এবং কে-পপ জগতে রাজত্ব করা বিটিএসের অনুসারী সংখ্যা প্রায় ৮০ মিলিয়নে সীমাবদ্ধ।
এশিয়ার মাটি থেকে উঠে এসে এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মান ছিনিয়ে নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। ২০১৯ সালে ভারতে স্পটিফাই চালু হওয়ার মাত্র ছয় বছরের মধ্যে অরিজিৎ এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছেন, যা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের বিষয় হয়ে উঠেছে। শুধু ভারতের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিকে বিশ্ব সংগীতের মূলধারায় নিয়ে আসার এই সাফল্য অরিজিৎ সিংয়ের নামকে পৌঁছে দিয়েছে ইতিহাসের এক বিশেষ উচ্চতায়।
অরিজিৎ সিং শুধু কণ্ঠশিল্পী নন—তিনি সুরকার ও সংগীত প্রযোজক হিসেবেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তার গলায় গান মানেই এক ধরনের আবেগ, যন্ত্রণা ও প্রেমের মিশ্রণ। ২০২৪ সালে তার গাওয়া একাধিক গান যেমন শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে, তেমনি গানে গানে ভেঙেছেন স্ট্রিমিং রেকর্ডও। ‘তুম হি হো’, ‘কেশরিয়া’, ‘তুম কেয়া মিলে’, ‘ধুন’ (সাইয়ারা সিনেমা), এবং ‘জানে তু’ (ছাবা সিনেমা)—এই গানগুলো ২০২৪ সালের সবচেয়ে বেশি শোনা গানের তালিকায় জায়গা করে নেয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে অরিজিৎ সাময়িকভাবে টেলর সুইফটকে স্পটিফাই অনুসারীর সংখ্যায় ছাড়িয়ে যান। তবে ২০২৪ সালে সেই অবস্থানকে তিনি স্থায়ী করে তোলেন এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এসে এই অবস্থান আরও বেশি দৃঢ় হয়, যেখানে তিনি একমাত্র সংগীতশিল্পী যিনি ১৫০ মিলিয়নের বেশি অনুসারী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন।
এই অর্জন শুধু অরিজিৎ সিংয়ের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত, সংস্কৃতি ও কণ্ঠশিল্পীদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা। যেভাবে তিনি গানের ভাষা, আবেগ আর হৃদয়ের ব্যথাকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে সংগীতের কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা নেই—শুধু দরকার এক হৃদয়ছোঁয়া কণ্ঠ ও সুরের মায়া।
বিশ্বসংগীতের এই ঐতিহাসিক পালাবদলে অরিজিৎ সিং হয়ে উঠেছেন এক যুগের প্রতিনিধিত্বকারী নাম। তার এই যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে, হৃদয় থেকে গাওয়া গান কখনোই সীমানার মধ্যে আটকে থাকে না।