প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বলিউডের সুপারস্টার সালমান খান—যিনি শুধু তার অভিনয় দক্ষতা বা অ্যাকশন দৃশ্যের জন্যই নন, বরং নিজের নীতিগত অবস্থানের কারণেও বারবার আলোচনায় আসেন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে রাখা এই অভিনেতা বরাবরই এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত—তিনি কখনো পর্দায় চুম্বন দৃশ্যে অংশ নেন না।
এই ‘নো কিসিং পলিসি’ নিয়ে বলিউডে বহুবার আলোচনা হয়েছে। যদিও তাঁর বহু সিনেমাতেই রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে, তবুও সালমান বরাবরই পর্দায় নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত যে শুধুই লোক দেখানো কোনো ইমেজ নির্মাণ নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত—তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
সালমান খানের ক্যারিয়ার শুরু থেকেই এই নীতির অনুসরণ লক্ষ্য করা গেছে। তবে তাঁর দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবনে মাত্র একবারই এই নীতিতে ব্যতিক্রম ঘটেছিল। নব্বইয়ের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জিত’ সিনেমায় কারিশমা কাপুরের সঙ্গে একটি লিপ কিস দৃশ্যে দেখা যায় সালমানকে। ওই দৃশ্যটি আজও তাঁর ভক্তদের মধ্যে আলোচনার বিষয়। কিন্তু সেই ব্যতিক্রম আর কখনো ঘটেনি। এমনকি এরপর কারিশমার সঙ্গেও বহু সিনেমায় কাজ করলেও কখনো চুম্বনের দৃশ্যে অংশ নেননি সালমান।
২০১৭ সালে যখন সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ মুক্তির অপেক্ষায়, তখন পরিচালক আলি আব্বাস জাফর একটি চুম্বনের দৃশ্য রাখতে চেয়েছিলেন। তবে সালমান দৃঢ়তার সঙ্গে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর ভাষায়, দর্শকদের অনুভূতির প্রতি সম্মান রেখেই তিনি পর্দায় এই ধরনের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থেকে বিরত থাকেন।
এই প্রসঙ্গ বহুবার সালমানের ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। একবার একটি জনপ্রিয় কমেডি শো’তে এই নীতির বিষয়ে আলোচনা উঠলে তাঁর ভাই আরবাজ খান মজার ছলে বলেন, “আসলে ক্যামেরার পেছনে এত চুমু খান, যে পর্দায় আর প্রয়োজন পড়ে না!” সালমান তখন শুধু হেসেছিলেন, কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। তাঁর সেই প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত জীবনের রহস্যগুলো নিয়ে তিনি নিজেই রহস্য জিইয়ে রাখতে পছন্দ করেন।
তবে বলিউডের সমসাময়িক অন্যান্য নায়কদের তুলনায় সালমান খান যে এক অন্যরকম অবস্থান নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, তা অস্বীকার করা যায় না। যেখানে বর্তমান সময়ের বহু সিনেমায় ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো ব্যবসায়িক সাফল্যের অনিবার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে সালমানের মতো একজন সুপারস্টারের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাহসিকতার পরিচায়ক।
বহু সমালোচক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করেন, সালমান খানের এই ‘নো কিসিং পলিসি’ কেবল তাঁর ব্যক্তিত্বের এক দিক নয়, বরং বলিউডে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। যেখানে অনেকেই জনপ্রিয়তা ও ব্যবসার জন্য নিজস্ব নীতিমালাকে ভেঙে ফেলেন, সেখানে সালমান আজও নিজের পথেই অনড়।
এই অবস্থান তাঁকে কিছুটা রক্ষণশীল ভাবমূর্তির পরিচায়ক করলেও, তাতে তাঁর জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। বরং সময়ের সঙ্গে তাঁর প্রতি দর্শকদের শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো সালমান খান প্রেমে পড়েছেন একাধিকবার, কিন্তু পর্দায় প্রেমিক হয়ে থেকেও তিনি যেটা কখনো করেননি, তা হলো ঠোঁটে ঠোঁট রাখার দৃশ্য।
এভাবেই সালমান খান প্রমাণ করে চলেছেন—প্রেম, আবেগ ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রকাশের জন্য চুম্বনের দৃশ্য আবশ্যক নয়। একজন শিল্পী তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন অন্য অনেক উপায়ে—সালমানের পর্দার প্রেমিকসত্তা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।