প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি অধিনায়ক ইমরান খান যেমন ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনীতির পটভূমিতে এসে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, ঠিক তেমনই এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অনেক সফল ক্রীড়াবিদ রাজনীতির মাঠেও নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। বাংলাদেশেও এ প্রবণতা লক্ষণীয়, যেখানে জাতীয় দলের অনেক তারকা ক্রীড়াবিদ নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে খুলনা-৪ আসন থেকে সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মানিকগঞ্জ-১ থেকে দেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, নড়াইল-২ ও মাগুরা-১ থেকে যথাক্রমে মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাচ্ছেন। তবে রাজনৈতিক সফলতার পাশাপাশি বিতর্কও সামলাতে হয় তাদের।
বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ফুটবল তারকা আমিনুল হক সম্প্রতি একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বর্তমান এমপি সাকিব আল হাসানের এমপি হওয়ার পেছনে অবৈধ সরকারের প্রলোভন ছিল। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর এবং অবৈধ সংসদের একজন এমপি সাকিবের বিষয়ে রাষ্ট্রই সিদ্ধান্ত নেবে। খেলোয়াড় থাকাকালীন সময়ের অবৈধ সরকারের প্রলোভনে পড়ে তার এমপি হওয়ার বিষয়টি যদি আমরা ভুলে যাই, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে যারা রক্ত দিয়েছেন ও প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতিও বেঈমানি করব।’
সাক্ষাৎকারে আমিনুল হক আরও জানান, ‘রাজনীতিতে ফিটনেস ফুটবলের মতোই দরকার। দিনভর কথা বললেও ক্লান্ত হই না আমি।’ তিনি রাজনীতির জন্য প্রবাসীদের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ে আরও বেশি কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাময়িকভাবে প্রবাসীদের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারি, তবে দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির জন্য আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী কাপ বা মা-মণি গোল্ডকাপের মতো ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট পুনরায় চালু করতে হবে।’
রাজনীতিতে প্রবেশ করা ক্রীড়াবিদদের সফলতার পাশাপাশি তাদের অতীত এবং রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও বিতর্ক এবং প্রশ্নাবলী থেকে তারা মুক্ত নন—এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন আমিনুল হক। তিনি মনে করেন, খেলোয়াড়দের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবেশে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ক্রীড়া ও রাজনীতির এই সংযোগ ভবিষ্যতে কী রূপ নেবে, তা সময়ই বলবে। তবে সমাজ ও রাজনীতিতে ক্রীড়াবিদদের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে, যেখানে সফলতার সঙ্গে সাথে তারা মুখোমুখি হচ্ছেন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনার।
এখানে দেশের রাজনীতির প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরানোর জন্য প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করা প্রতিটি নির্বাচিত প্রতিনিধির দায়িত্ব বলে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ক্রীড়াবিদ থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন, তাদেরকে উচিত আরও বেশি দায়িত্বশীলতা ও সততার সঙ্গে কাজ করা, যাতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
এই প্রসঙ্গে, দেশের রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণকেও প্রয়োজনীয় সমালোচনা ও আলোচনায় অংশ নিয়ে ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় থাকে এবং দেশের উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অটুট থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনীতিতে ক্রীড়াবিদদের ভূমিকা নিয়ে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা হলেও, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে এসব রাজনৈতিক ক্রীড়াবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়টি সময়ের দাবি।
আমিনুল হকের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশের ক্রীড়া ও রাজনীতির সংযোগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই উঠে এসেছে স্পষ্ট করে। দেশের ক্রীড়াবিদদের রাজনৈতিক অঙ্গনে উপস্থিতি, তাঁদের ভূমিকা এবং তাদের গতিবিধি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।