সর্বশেষ :
তানজিন তিশা: ‘দুইটা বিয়ে করেছি, তিন নাম্বারের প্রস্তুতি চলছে’—গুজব নিয়ে মুখ খুললেন আলোচিত অভিনেত্রী ট্রাম্পের নতুন শুল্ক যুদ্ধ: ১২ দেশের পণ্যে সোমবার থেকে আসছে বাড়তি শুল্ক দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ড. এনামুল হক অবৈধ সরকারের প্রলোভনে এমপি হয়েছেন সাকিব’: আমিনুল হকের কঠোর মন্তব্য নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ইরান সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পরিদর্শনের অনুমতি দিচ্ছে না’: ট্রাম্প পঞ্চাশেরও অধিক মানুষকে সামনে গুলিতে নিহত হতে দেখেছি” — আলী আহসান জুনায়েদ জুলাই বিপ্লবকে কটাক্ষ করে ফেসবুক পোস্ট—কনস্টেবল রনি সাময়িক বরখাস্ত আমরা দিই, নেই না”—চাঁদা বিতর্কে মুফতি ফয়জুল করিমের সোজাসাপ্টা জবাব গাজায় নিজেদের গুলিতে নিহত ৩১ সেনা: ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দুর্বল সমন্বয় প্রশ্নবিদ্ধ

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের ছায়া পাকিস্তানে: সীমান্ত বন্ধ, ভেতরে চাপা বিস্ফোরণের আতঙ্ক

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ৩৮ বার

প্রকাশ: ১৭ই জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ পাকিস্তানের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে কৌতূহল ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অনেকে ভাবছেন, এটি কি কেবল একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, নাকি এর পেছনে আছে গভীর কোনো নিরাপত্তা সংকট? পরিস্থিতির বিশ্লেষণ বলছে, পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক কৌশল, যেখানে বাইরের যুদ্ধের প্রভাব ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের ভেতরের অস্থিরতাও বড় এক ভূমিকা পালন করছে।

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, সীমান্ত বন্ধের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশি সংঘাতের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে দেশকে রক্ষা করা—কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। পাকিস্তান বর্তমানে এমন এক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকটে রয়েছে, যা যেকোনো সময় বিস্ফোরণের মতো ফেটে পড়তে পারে। একে একে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বহু সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী—যেমন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP), ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (ISKP), ব্যালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA), সিন্ধুধেশ লিবারেশন আর্মি (SLA), সিপাহ-ই-সহাবা (Sunni extremist group), এবং সিপাহ-ই-মুহাম্মদ (Shia extremist group)। এদের প্রত্যেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।

এই বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো যে কেবল আদর্শের ভিত্তিতে লড়ছে, তা নয়—এরা আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের ছায়ায়ও নিজেদের অপারেশন চালাতে সক্ষম। বিশেষ করে যখন বাইরের বিশ্বে বড় কোনো সামরিক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই ধরনের গোষ্ঠীগুলো আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ এই সময় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বা রাজনৈতিক স্বার্থে নিয়োজিত পক্ষগুলো গোপনে তাদের সহায়তা দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এভাবেই এক দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক আগ্রহের একটি অংশ।

এখানেই ভারতের ভূমিকাটি বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক এক গভীর সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে রয়েছে তথ্য আদান-প্রদান, প্রযুক্তি ভাগাভাগি এবং যৌথ নিরাপত্তা স্বার্থে কৌশলগত মৈত্রী। এদের সম্পর্ক এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যাকে অনেকে “একই মায়ের পেটের যমজ ভাই” বলেও অভিহিত করছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ধারণা করছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ যত তীব্র হবে, ততই ভারত এই সংঘাতের ফাঁকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার সুযোগ নিতে পারে। ভারতের কাছে বিদ্রোহীগোষ্ঠীদের চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনে তাদের কৌশলগতভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং বিদ্রোহীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো সক্ষমতা ভারতের আগে থেকেই আছে।

পাকিস্তান এই ঝুঁকি ভালো করেই বুঝতে পারছে। তাই দেশটির সীমান্ত বন্ধ করার পদক্ষেপকে শুধু প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে নয়, বরং একটি পূর্বপ্রস্তুতিমূলক যুদ্ধ-বিরোধী কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। সীমান্ত বন্ধ রেখে তারা বাইরের যেকোনো অস্থিতিশীলতা যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চাইছে। একই সঙ্গে দেশীয় বিদ্রোহীদের পুনর্গঠনের সুযোগ সীমিত রাখতে চাইছে।

এই সমগ্র পরিস্থিতি একটি বড় বার্তা বহন করে: আধুনিক যুদ্ধ আর আগের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে কেবল সেনা মোতায়েন আর গোলাবারুদের লড়াই নয়। আজকের যুদ্ধ অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিক, কৌশলগত ও কূটনৈতিক। রাষ্ট্রের অন্দরমহলকে টার্গেট করেই এখন পরিচালিত হচ্ছে আধুনিক ছায়াযুদ্ধ। এবং এই খেলায় বিজয়ী হওয়ার জন্য শুধু অস্ত্র নয়, দরকার দূরদর্শিতা, সজাগতা ও কৌশলগত সচেতনতা।

যখন যুদ্ধের আগুন সীমান্ত ছাড়িয়ে চলে আসে রাষ্ট্রের অন্তর্গত শিরায়, তখন সময় এসে যায় — নিজেকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার।
এখন প্রশ্ন একটাই: এই ছায়াযুদ্ধের কৌশলে কে এগিয়ে থাকবে — পাকিস্তান, নাকি তাদের ছায়ার প্রতিপক্ষ?

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া