প্রকাশ: ১২ই জুন, ২০২৫ • একটি বাংলাদেশ ডেস্ক • একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রাসাদ, বাকিংহাম প্যালেসের দ্বার বৃহস্পতিবার উন্মুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য। এই একান্ত সাক্ষাতে তাঁকে স্বাগত জানান মহামান্য রাজা তৃতীয় চার্লস, যা শুধু ব্যক্তি ইউনূসের জন্য নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে।
রাজপরিবারের প্রটোকল ও ঐতিহ্যের আলোকে ‘প্রাইভেট অডিয়েন্স’ বা একান্ত সাক্ষাৎ সাধারণত খুব সীমিত পরিসরের মানুষের জন্য বরাদ্দ থাকে, যাঁরা কেবল রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনৈতিক আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত হন। এই উপলক্ষে ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে রয়েছে তাঁর আন্তর্জাতিক মর্যাদা, সমাজ উন্নয়নে দীর্ঘদিনের কাজ এবং সাম্প্রতিক ব্রিটেনে অবস্থানকালীন কর্মকাণ্ড।
এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক বিবরণ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ না করা হলেও, নিকটসূত্রে জানা গেছে এটি ছিল উষ্ণ, সম্মানসূচক এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ড. ইউনূস তার আলোচনায় বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের আর্থসামাজিক বাস্তবতা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে গুরুত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশে মাইক্রোক্রেডিট এবং সামাজিক ব্যবসার মডেল কিভাবে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতাও ভাগাভাগি করেন। রাজা চার্লস দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন—তাঁর আগ্রহের এই ক্ষেত্রে ইউনূসের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে একটি দিকনির্দেশনামূলক আলোচনার জন্ম দেয়।
এই সাক্ষাৎকে ঘিরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আগ্রহও ছিল লক্ষণীয়। কারণ এটি এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যখন ইউনূস আন্তর্জাতিক আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত এবং অবৈধ অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন। বিশেষ করে, ব্রিটেনে থাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এই সাক্ষাৎ তাঁর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা আরও সুদৃঢ় করলো বলে অনেকেই মনে করছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়, যেখানে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নও প্রায়শই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বলি হয়, সেখানে এই বৈঠক একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব এবং গ্লোবাল ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক উন্নয়নের প্রশ্নে ড. ইউনূসের ভূমিকার স্বীকৃতি। একইসাথে এটি প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশি নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
এমন একটি মুহূর্তে, যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিভাজন, দুর্নীতির অভিযোগ এবং বহির্বিশ্বে আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে, তখন এই রকম সম্মানজনক একটি সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে দেশের ভাবমূর্তি সুদৃঢ় করে। রাজার সাথে এই আলাপচারিতা কেবল সৌজন্যমূলক নয়, বরং তা বহন করছে দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক আস্থা বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
এই উপলক্ষে ইউনূসের পরিধান ছিল যথাযথভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারের সমন্বয়। তাঁর মুখে ছিল আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ ছিল বিশ্লেষণধর্মী, এবং ভাষায় ছিল মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের ছাপ।
রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে এই সাক্ষাৎ প্রমাণ করে যে, ব্যক্তির অতীত অর্জন ও বর্তমান দায়িত্ব যদি আন্তর্জাতিক নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে রাষ্ট্রসীমার গণ্ডি পেরিয়েও জাতির সম্মান বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই একান্ত সাক্ষাৎ ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।