প্রকাশ: ১৯ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শেষ হলেও এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে গ্রীষ্মের এক অনন্য উপাদেয় ফল—জাম। এর রং, স্বাদ ও গন্ধে যেমন আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে, তেমনি পুষ্টিগুণেও এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মিষ্টি ও হালকা টক স্বাদের এই রসালো ফলটি শুধু রসনাতৃপ্তিই করে না, একই সঙ্গে শরীরের নানা উপকারেও আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা পাওয়া যায়। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদান, যা হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে, পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়ানো, রক্ত পরিষ্কার রাখা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও জাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে এত উপকারী এই ফলটি খাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, যা অনেকেই অজান্তে উপেক্ষা করে ফেলেন। কারণ এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে জাম একসাথে বা কাছাকাছি সময়ে খেলে শরীরের ওপর পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।
প্রথমেই বলা যায় মিষ্টির কথা। অনেকেই জাম খাওয়ার পর মুখের স্বাদ বদলাতে মিষ্টি খেয়ে থাকেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একেবারেই ঠিক নয়। জাম খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যবধান না রেখে যদি মিষ্টি খাওয়া হয়, তবে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাকস্থলীতে গ্যাস জমা হওয়া, পেট ফাঁপা বা অম্বলের মতো সমস্যা হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, জাম খাওয়ার পরপর পানি পান করাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেহেতু জাম নিজেই একটি রসালো ফল, তাই এটি খাওয়ার পর অতিরিক্ত পানি হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। বিশেষত গ্যাস, পেটব্যথা কিংবা বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, জাম খাওয়ার অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি পান করা উচিত।
তৃতীয়ত, জাম খাওয়ার সময় যেটি একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত, তা হলো আচার। জাম ও আচার—উভয়ই টক ও অম্ল প্রকৃতির খাবার। একসঙ্গে খেলে তা পাকস্থলীতে অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বুক জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি এবং হজমে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে।
এছাড়া, জাম খাওয়ার সময় আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—তা হলো দুধ। অনেকেই ভাবেন ফলের সঙ্গে দুধ খেলে বাড়তি পুষ্টি পাওয়া যাবে। কিন্তু জাম ও দুধ একসঙ্গে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দুটি খাবারই ঠান্ডা প্রকৃতির। ফলে একসঙ্গে খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে। এমনকি পেটের মারাত্মক সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। যদি জাম ও দুধ দুটোই খেতে হয়, তাহলে অন্তত আধঘণ্টার ব্যবধান রাখা প্রয়োজন।
সুতরাং, জামের উপকারিতা পেতে হলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। অসাবধানতাবশত ভুল খাবারের সঙ্গে জাম খেলে যেমন পেটের সমস্যা হতে পারে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে হজমের জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থতার জন্য জ্ঞানভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই।