প্রকাশ: ২০শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে—আন্তর্জাতিক মানবতা ও সহানুভূতি কি আজও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে? না কি রাজনীতি ও প্রভাবের বলয়ে আবদ্ধ হয়ে গেছে এই শব্দগুলো?
সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল প্রতিক্রিয়া। পশ্চিমা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত সবাই তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিচ্ছে। মানবতাবাদী সংস্থা, রাষ্ট্রপ্রধান, এমনকি ধর্মীয় নেতারাও একের পর এক বিবৃতি দিচ্ছেন এই ঘটনার নিন্দায়।
কিন্তু, অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে এই ঘটনার ঠিক তিন দিন আগে ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালও ঠিক একই ধরনের হামলার শিকার হয়েছিল, যেখানে আহত হয় বহু সাধারণ রোগী, কর্মী এবং শিশুরা। সেই হামলায় হাসপাতালের অন্তত একটি ওয়ার্ড পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে সেই ঘটনার কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বড় কোনো সংবাদমাধ্যম সেটিকে উল্লেখ করাও প্রয়োজন মনে করেনি। জাতিসংঘ কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও আসেনি কোনো বিবৃতি, কোনো উদ্বেগ বা সহানুভূতি।
এই দ্বিমুখী আচরণ শুধু রাজনৈতিক পক্ষপাত নয়, এটি মানবতার মানদণ্ডেরও চরম অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। বিশ্ব যদি সত্যিই মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তা শুধু বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য নয়—প্রত্যেক নিরপরাধ মানুষের জন্য সমানভাবে হওয়া উচিত। ইরানে যারা হাসপাতালে আহত হয়েছে, তারা কি কোনো ভিন্ন মানবপ্রজাতির? তাদের রক্ত কি লাল নয়?
বিরশেবা কিংবা কেরমানশাহ—উভয় হাসপাতালেই যে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু একটি ঘটনাকে হাইলাইট করে আরেকটি ঘটনাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার মানে দাঁড়ায়, কার জীবনের মূল্য কত, তা ঠিক করে দিচ্ছে রাজনীতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণমাধ্যমের পক্ষপাতী কাভারেজ এখন এতটাই প্রকট যে, কোনো দেশ বা গোষ্ঠীকে ‘ভিক্টিম’ বানিয়ে তোলা হয় মুহূর্তে, আবার কাউকে ‘অপরাধী’ বানিয়ে ফেলা হয় সেকেন্ডে। এই ধরনের ‘সিলেক্টিভ এমপ্যাথি’ বা নির্বাচিত সহানুভূতি মানবতাবাদের মূল আদর্শকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
বিরশেবার হাসপাতালের হামলা নিশ্চয়ই নিন্দনীয় এবং এর বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ঠিক একইভাবে কেরমানশাহের হাসপাতালে যারা আহত হয়েছে, যারা তাদের আপনজন হারিয়েছে, তাদের দুঃখ, ক্ষোভ বা বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কি কম গুরুত্বপূর্ণ?
যদি আমরা সত্যিই বিশ্বাস করি ‘মানবতা সবার আগে’, তাহলে আমাদের বিচারও হতে হবে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ। নয়তো এই পৃথিবী কেবল শক্তির কাছে নতজানু হয়ে থাকা এক জঞ্জালেই পরিণত হবে, যেখানে কারা কাঁদবে, কারা মরবে আর কারা বিচার পাবে—তা নির্ধারণ করবে রাজনীতি, ন্যায়বিচার নয়।
এটাই কি মানবতার পরিণতি? নাকি আমরা এখনো সময় আছে, ভুল স্বীকার করে সঠিক পথে ফিরে যেতে পারি? সময়ই দেবে উত্তর।