প্রকাশ: ২০শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে এক অনন্য ঘটনা ঘটে গেল গতকাল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। এই আমন্ত্রণ কেবল একটি প্রথাগত সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের গতিপথে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। মার্কিন প্রশাসনের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা, কেননা সাধারণত কোনো দেশের সামরিক প্রধানকে সরাসরি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে এই ধরনের অনুষ্ঠানে দেখা যায় না।
এই সাক্ষাতের পটভূমি অত্যন্ত জটিল। গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখার দাবি করেছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে, পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের এই নতুন মোড় নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকায় পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থান নতুন করে মূল্যায়ন করছে ওয়াশিংটন।
পাকিস্তানের ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত ইরানের সঙ্গে সংযুক্ত, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক, সেইসাথে চীনের সঙ্গে ইসলামাবাদের গভীর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকায়, এই মধ্যাহ্নভোজকে অনেকেই একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই সাক্ষাৎ কি পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ফিরিয়ে আনার একটি চেষ্টা, নাকি এটি শুধুমাত্র ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কূটনৈতিক স্টাইল?
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই সাক্ষাৎ শুধুমাত্র একটি প্রতীকী বার্তা নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তান-নীতিতে একটি বড় রদবদলের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, কেউ কেউ এটিকে ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ অপ্রচলিত কূটনীতির অংশ বলেই মনে করছেন। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই সাক্ষাৎ কি পাকিস্তানকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি কঠিন নির্বাচনের মুখে ফেলবে? পাকিস্তান ইতিমধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, এবং এই সম্পর্ককে ত্যাগ করে বা দুর্বল করে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝোঁকা ইসলামাবাদের জন্য কতটা সহজ হবে?
এই মধ্যাহ্নভোজের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে নানা ধরনের জল্পনা শুরু হয়েছে। কূটনীতিবিদরা এখন লক্ষ্য করছেন, এই সাক্ষাৎকারের পর পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়। এটি কি শুধুই একটি মুহূর্তের কূটনৈতিক ঘটনা, নাকি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন কোনো জোট বা মেরুকরণের সূচনা? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট, তবে একথা নিশ্চিত যে, ট্রাম্পের এই আমন্ত্রণ ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।