প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য যখন দিনদিন প্রকট হচ্ছে, ঠিক তখনই বিকল্প ও মানবিক অর্থনৈতিক কাঠামোর দিকে দৃষ্টিপাত করার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনে দিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাভারের জিরাবোতে অবস্থিত সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার মডেল শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।
দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, “বিগত সরকার আমাদের সামাজিক ব্যবসা দিবস উদযাপন করতে দেয়নি। এমনকি তিন শূন্যের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর মতে, দান বা সাহায্য নয়, বরং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই বাস্তব ও টেকসই পথ। এই ধরণের ব্যবসা মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, যা বর্তমান আর্থ-সামাজিক সংকটের প্রেক্ষিতে একান্ত প্রয়োজনীয়।
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, “বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছে নিছক স্বার্থপরতার ভিত্তিতে। এ পথ মানবতার জন্য ধ্বংস ডেকে আনছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ধারা পরিবর্তন করা জরুরি। তরুণরাই পারে এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব নিতে।”
তিনি তরুণদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান—“তোমরা চাকরি খুঁজবে না, উদ্যোক্তা হবে। নিজের প্রয়োজনে নিজের বিশ্ব গড়ে তোলো। শিক্ষাব্যবস্থাও এমন হওয়া উচিত, যা স্বপ্ন দেখায় ও নিজস্ব চিন্তার বিস্তার ঘটায়।”
ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন, “আমরা ভুল পথে চলেছি, এখন সময় এসেছে সমাজ ও পৃথিবীকে একটি মানবিক ও ন্যায়নিষ্ঠ কাঠামোয় ফিরিয়ে আনার। সামাজিক ব্যবসাই সেই ভবিষ্যতের পথ হতে পারে।”
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের ৩৮টি দেশের ১৮০ জনেরও বেশি বিদেশি প্রতিনিধি। এছাড়াও দেশি-বিদেশি মিলিয়ে এক হাজারের বেশি উদ্যোক্তা, গবেষক, সমাজকর্মী এবং তরুণ শিক্ষার্থী এতে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানজুড়ে আলোচনা হয় কীভাবে সামাজিক ব্যবসার নীতিকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও দারিদ্র্য নিরসনের মতো মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তারা তাঁদের নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়িত প্রকল্প ও সাফল্যের গল্প শেয়ার করেন।
এই আয়োজন কেবল একটি দিবস উদযাপনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং এটি হয়ে উঠেছে সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রজ্ঞাময় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে উদ্ভাবনী ভাবনা, বিকল্প অর্থনৈতিক মডেল এবং তরুণ নেতৃত্বের শক্তিকে একত্রিত করে নতুন বিশ্ব নির্মাণের স্বপ্ন দেখা হয়। আর সেই স্বপ্নের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন ড. ইউনূস, যিনি বিশ্বাস করেন—মানুষের মঙ্গলকে মুনাফার ওপরে স্থান দিয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী।