প্রকাশ: ০৬ জুলাই’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এক নারীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এবং হত্যার পর স্বামীর নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণের ঘটনা এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের র্যালি আবাসিক এলাকার ২ নম্বর গলিতে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত ও স্তব্ধ করে দেয়।
নিহত নারী বিজলী আমেনা (২৯) কুমিল্লার কান্দাইল গ্রামের বাসিন্দা বাহার মিয়ার মেয়ে। আর অভিযুক্ত স্বামী মো. ইমরান (৪৫) নারায়ণগঞ্জের তপন চন্দ্র দাসের ছেলে। ইমরান এই ঘটনার পর নিজেই থানায় গিয়ে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং আত্মসমর্পণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিজলী ও ইমরানের সম্পর্কের শুরু হয় প্রেমের মাধ্যমে। দুইজনই পূর্বে বিবাহিত ছিলেন এবং একপর্যায়ে নিজেদের প্রথম সংসার ভেঙে দেন। প্রায় সাত-আট মাস আগে ইমরান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিজলীকে বিয়ে করেন। এরপর তাঁরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের র্যালি আবাসিক এলাকায় হাজী শরীফ ভিলার পঞ্চম তলায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।
সেই শান্তি খোঁজার বাসা পরিণত হয় রক্তাক্ত মৃত্যুক্ষেত্রে। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শুক্রবার রাতেও তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইমরান রান্নাঘরে থাকা মাছ কাটার বটি দিয়ে স্ত্রী বিজলীকে উপর্যুপরি কোপাতে শুরু করেন। ঘটনার সময় হতভম্ব হয়ে পড়েন আশপাশের মানুষ। কিছু সময় পর বিজলীর ছোট বোন বৃষ্টি আক্তার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিজলীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই নির্মম ঘটনার পর ইমরান সরাসরি থানায় যান এবং পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যা করার কথা অকপটে স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হেফাজতে নেয় এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে।
ওসি লিয়াকত আলী বলেন, “আসামি নিজেই থানায় এসে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।”
এই ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক কলহের পরিণতিই নয়, বরং এটি সমাজে বিরাজমান মানসিক অস্থিরতা, অবিশ্বাস এবং সম্পর্কের সংকটের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী ও স্বজনরা শোকের ছায়ায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
এক সময় প্রেমের টানে ঘর ভেঙে গড়া এই সংসার, শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত অধ্যায়ে গিয়ে থামলো। সমাজ ও নৈতিকতার প্রশ্নে এটি এক গভীর শিক্ষার বার্তা রেখে গেল, যে ভালোবাসা ও সম্পর্ক যদি স্থিতি ও সম্মানের ভিত্তিতে না দাঁড়ায়, তাহলে তা রক্তাক্ত পরিণতিতে গড়াতে বেশি সময় লাগে না।