প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা সৃষ্টির প্রত্যয়ে আত্মপ্রকাশকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ধীরে ধীরে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুসংগঠিত ও বিস্তৃত করতে শুরু করেছে। চলমান ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণ পদযাত্রা’ কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি সারাদেশে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। এই পদযাত্রার মাধ্যমে জনসংযোগ, রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানো এবং নিজস্ব কর্মসূচির প্রচারের পাশাপাশি এনসিপি বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতেও শুরু করেছে।
দলটি এবারের আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই বেশ কিছু নির্বাচনী আসনে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছে বা তাদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করছে, যা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এনসিপির প্রস্তুতিরই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
পদযাত্রার মাধ্যমে এনসিপি নেতৃত্ব দিয়েছে ‘জুলাই সনদ’, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে। একইসঙ্গে দলীয়ভাবে সংগঠন যেখানে শক্তিশালী, সেখানে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা এবং জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী বাছাই করছে দলটি। দলীয় সূত্র বলছে, এই সিদ্ধান্তগুলো সবসময় পূর্বপরিকল্পিত ছিল না; বরং ঘটনাপ্রবাহ ও জনসম্পৃক্ততা মূল্যায়ন করে তা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে রংপুর-৪ আসনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, কুড়িগ্রাম-২ এ যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ এবং পঞ্চগড়-১-এ মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা বা প্রচারের মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে। যদিও সারজিস আলমের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তার নামে স্লোগান ওঠায় ইঙ্গিত স্পষ্ট।
দলের যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির জানান, যেসব আসনে দলীয়ভাবে সংগঠন মজবুত এবং প্রতিদ্বন্দ্বী কম, সেখানে নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। আর যেসব জায়গায় সংগঠন বিস্তারের সুযোগ রয়েছে, সেখানে পরিচিতি বাড়ানো হচ্ছে কৌশলগতভাবে।
এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসনে নিজেদের প্রস্তুত করছেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার রামপুরা-বনশ্রী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রস্তুত হচ্ছেন ঢাকা-১৪ আসনের জন্য, আর সামান্তা শারমিনকে ভাবা হচ্ছে ভোলা-১ আসনের জন্য। ডা. তাসনীম জারা ঢাকা-১৭, হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ এবং আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু আসনেও এনসিপির নেতারা মাঠপর্যায়ে সক্রিয়। আকরাম হুসাইন (ঢাকা-১৩), জয়নাল আবেদীন শিশির (কুমিল্লা-১০), এস এম শাহরিয়ার (ঢাকা-৫), জাবেদ রাসিন (ঢাকা-৯), মো. রাসেল আহমেদ (ঢাকা-১) এবং আবদুল্লাহ আল আমিন (নারায়ণগঞ্জ) নিজ নিজ এলাকায় দলের কর্মসূচি ও সাংগঠনিক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এর বাইরে এনসিপির একাধিক নেতার নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন অঞ্চলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায়। আলী নাছের খান গাজীপুর-১, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২, প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার, আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১, অলিক মৃ টাঙ্গাইল-১, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১ এবং মীর আরশাদুল হক চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, আবু সাঈদ সুজাউদ্দীন কক্সবাজারের একটি আসন, সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ মাহমুদ খান গাজীপুর-৩, আবু সাঈদ লিওন নীলফামারী-৩, ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল ভোলা-৪ থেকেও এনসিপির প্রার্থী দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া সিলেট অঞ্চলে অর্পিতা শ্যামা দেব এবং এহতেশাম হক, কুষ্টিয়া-১-এ নুসরাত তাবাসসুম, চট্টগ্রাম-১৪-এ হাসান আলী এবং নেত্রকোনা-২ আসনে নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনসিপির এই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ও চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ইঙ্গিত দেয়, দলটি শুধু আন্দোলন-সংগ্রামে সীমাবদ্ধ না থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করা, তরুণ ও শিক্ষিত নেতৃত্বকে সামনের সারিতে আনা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে এনসিপি একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
এখন দেখার বিষয়, আসন্ন নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় এবং এনসিপি তার কৌশলগত পরিকল্পনায় কতটা সফলতা অর্জন করতে পারে।