প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে তাকে হাফ প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে—যা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক, বিভ্রান্তি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনার ঢেউ। তবে অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে, আলোচিত ছবিটি আসল নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর চিত্র।
তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার তাদের অনুসন্ধানে নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি একটি সম্পাদিত সংস্করণ। এটি মূলত ডা. তাসনিম জারার পূর্বে তোলা একটি ফুল প্যান্ট পরিহিত ছবিকে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আধুনিক এআই টুলের সাহায্যে পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে—মূল পটভূমি অপরিবর্তিত রেখে। এমন ধরনের প্রযুক্তি এখন সাধারণভাবে সহজলভ্য হওয়ায় যেকোনো ছবি খুব সহজেই বিকৃত বা বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
ভাইরাল ছবিটির উৎস খুঁজতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, ‘Fariha Nishat’ নামক একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ৩ জুলাই ছবিটি পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে ফারিহা নিশাত নিজেই ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, ভাইরাল হওয়া ছবিটি প্রকৃত নয় এবং এটি তারই সঙ্গে ডা. তাসনিম জারার একটি পুরোনো ছবি থেকে বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে। সেই পোস্টে ফারিহা মূল ছবিটিও যুক্ত করেন, যেখানে দেখা যায় উভয়েই ফুল প্যান্ট পরিহিত ছিলেন।
রিউমর স্ক্যানার আরও জানায়, মূল ছবিটি ফারিহা নিশাত ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিলেন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভাইরাল ছবির পটভূমি, আলোর প্রতিফলন ও ফ্রেম এক হলেও পোশাকের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পরিবর্তন রয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেয় এটি সম্পাদিত চিত্র। এছাড়া ভাইরাল ছবিটিতে তাসনিম জারার আঙুলের গঠন ও কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে, যা এআই-সম্পাদনার সাধারণ লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চিত্র সম্পাদনার প্রযুক্তি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা বা বিকৃত ছবি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া ছবি ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব প্রচারণা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে এআই যখন প্রগতির হাতিয়ার, তখন একই প্রযুক্তিকে অপব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ছবি ভাইরাল হলে তা যাচাই না করে বিশ্বাস না করাই শ্রেয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ধরনের ডিজিটাল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা।
এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আশীর্বাদ হতে পারে, তেমনি অপব্যবহার সমাজে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। দায়বদ্ধ সংবাদমাধ্যম ও তথ্যসচেতন নাগরিকই পারে এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি থেকে সমাজকে রক্ষা করতে।