সর্বশেষ :
হামাসের শক্তি পুনর্গঠন: গাজায় যোদ্ধার সংখ্যা ফের ৪০ হাজারে, ইসরাইলি জেনারেলের মন্তব্যে উত্তাল রাজনৈতিক অঙ্গন ধানমন্ডি হত্যায় আলোড়ন: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালনার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা রাফাল যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক অপপ্রচার: চীনের বিরুদ্ধে ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ টেকসই পর্যটনের ভাবনায় কক্সবাজারে প্রথম ট্যুরিজম আর্কিটেকচার সামিট প্লট দুর্নীতির ৬ মামলায় গেজেট প্রকাশ: হাইকমান্ডে হাসিনা-রেহানা ও ১০০ আসামিকে আদালতে তলব জনপ্রতিনিধিত্বের পথে এনসিপি: নির্বাচনী মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ বিশ্বের প্রথম বায়োমেট্রিক মেটাল ক্রেডিট কার্ডের সূচনা বাংলাদেশে: যুগান্তকারী পদক্ষেপ ইবিএল ও মাস্টারকার্ডের পাঠ্যপুস্তকে নির্ভুলতা আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ: শিক্ষকদের কাছে চাওয়া হয়েছে লিখিত সুপারিশ এআইয়ের ফাঁদে বিভ্রান্তি: ডা. তাসনিম জারার ভাইরাল ছবি নিয়ে যা সত্য লুটপাটের প্রতিচ্ছবি: ‘জুলাই প্রিলিউড’ পোস্টারে আওয়ামী আমলের দুর্নীতি চিত্রায়িত

গাজার রক্তাক্ত ত্রাণযুদ্ধ: ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ৭৪৩ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫
  • ০ বার
গাজার রক্তাক্ত ত্রাণযুদ্ধ: ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ৭৪৩ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি

প্রকাশ: ০৬ জুলাই’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়েই প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত ফিলিস্তিনি। গত কয়েক সপ্তাহে এমনই এক মর্মান্তিক চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭৪৩ জন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ৮৯১ জন। এ ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আলোচিত হয়েছে মানবিক সাহায্য কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম এবং তার আড়ালে যুদ্ধাপরাধমূলক আচরণের অভিযোগও।

আল জাজিরার বরাতে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ এর ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে সহায়তা নিতে গেলে ইসরায়েলি বাহিনী তাজা গুলি ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে জনতার ওপর। মে মাসের শেষভাগ থেকে চলমান এ ধ্বংসাত্মক ঘটনার জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো জিএইচএফ’কে দায়ী করছে। কারণ, এই সংস্থার সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এসব পয়েন্টে কোনো মানবিক সহানুভূতি বা সুরক্ষার কোনো নিদর্শন দেখা যায়নি।

গাজার চরম খাদ্য সংকটের পটভূমিতে ফিলিস্তিনিরা যখন সহায়তার আশায় জিএইচএফ-এর কেন্দ্রগুলোর দিকে ঝুঁকছে, তখনই সেখান থেকে ভেসে আসছে নিহত হওয়ার বিভীষিকাময় খবর। আহতদের অনেকেই জানান, তারা খালি পেটে দিনের পর দিন অপেক্ষার পর যখন কিছু খাবার পাওয়ার আশা নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছান, তখনই গোলাগুলি শুরু হয়। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার সংবাদিক হানি মাহমুদের মতে, ‘মানুষ ক্ষুধার্ত। তারা খাবারের আশায় জীবন বাজি রাখছে। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।’

এই ভয়াবহ ঘটনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) তাদের এক প্রতিবেদনে দুটি মার্কিন ঠিকাদারকে উদ্ধৃত করে জানায়, জিএইচএফ-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও কর্মীরা অবাধে ও নির্বিচারে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছেন। এপিকে দেওয়া বক্তব্যে ঠিকাদাররা বলেন, ‘তারা যা খুশি তাই করছে। এখানে কোনো মানবিক আচরণ নেই।’

তবে জিএইচএফ এ ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও জিএইচএফ-এর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় একমাত্র কার্যকর সাহায্য প্রদানের সংগঠন জিএইচএফ।’

তবে এই ব্যাখ্যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে ‘অমানবিক এবং সামরিকীকৃত মানবিক কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটি আরও জানায়, তাদের কাছে থাকা ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, এই কার্যক্রম আসলে গাজায় চলমান গণহত্যাকে আড়াল করার এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার একটি উপায় মাত্র।

আহতদের একজন মাজিদ আবু লাবান জানান, ‘আমার সন্তানরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি কোনো বিকল্প না পেয়ে মধ্যরাতে রাস্তায় নেমেছিলাম কিছু খাবার পাওয়ার আশায়। নেতজারিমে পৌঁছার পরই গোলাগুলি শুরু হয়। আমাদের লক্ষ্য করে কামানের গোলা ছুড়ে মারা হয়। সবাই শুধু বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি নিজেও আহত হই।’

এদিকে, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলছে, একটি অবরুদ্ধ জনপদে এই ধরনের সামরিকীকরণ এবং সাহায্যের নামে হত্যাযজ্ঞ আদৌ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় পড়ে কি না। একইসঙ্গে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই যৌথ ত্রাণ প্রকল্প আদতে ফিলিস্তিনিদের জীবনের নিরাপত্তা না এনে আরও সংকট বাড়িয়ে তুলছে বলেও মন্তব্য করা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে গাজা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। ফিলিস্তিনিদের কাছে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য চাওয়ার বাইরে কোনো বিকল্প পথ নেই। কিন্তু সেই চেষ্টাও যদি মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায় এড়ানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই যুদ্ধ শুধু রণাঙ্গনে নয়, এখন খাদ্যের লাইনে দাঁড়ানো অসহায় মানুষের ওপর চালানো নির্বিচার হত্যার যুদ্ধ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া