প্রকাশ: ০৬ জুলাই’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
আধুনিক সময়ের ব্যস্ততা, অনিশ্চয়তা আর ক্লান্তির ভিড়ে অনেকেই ভুলে যান নিজেকে ভালোবাসতে, নিজের জীবনের ছোট ছোট আনন্দকে উপভোগ করতে। কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও জনপ্রিয় মডেল সুনেরাহ বিনতে কামাল ঠিক সেই ভুলে গেছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক পাঠ শিখিয়ে দিতে—প্রতিটি দিনই বিশেষ, প্রতিটি নিঃশ্বাসেই আছে আনন্দের উপলক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি নিজের একটি আবেগময় অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সুনেরাহ জানান, আগে তিনি জীবনের “বিশেষ দিন”-এর জন্য তুলে রাখতেন পছন্দের জামাগুলো। ভেবেছিলেন, সেগুলো তিনি পরবেন সেইসব দিনে যেগুলো হবে ভিন্ন, অনন্য, গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সেই জামাগুলো আর কোনোদিন পরা হয়নি। এই উপলব্ধি থেকেই জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে যায়।
তিনি লিখেছেন, “এখন থেকে প্রতিটি দিন উদযাপন করব—জীবিত থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য, মানসিক প্রশান্তির জন্য। প্রতিটি নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। এর চেয়ে বিশেষ আর কী হতে পারে? আলহামদুলিল্লাহ।”
এই স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে সুনেরাহ যেন শুধু নিজের নয়, হাজারো মানুষের অন্তরের কথাই তুলে ধরেছেন। তার এই সরল অথচ গভীর উপলব্ধি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনুরাগীরা যেমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তেমনি অনেকেই নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
২০১১ সালে র্যাম্প মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজ জগতে প্রবেশ করেন সুনেরাহ। থিয়েটারে তার শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতা পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে এনে দেয় নতুন মাত্রা। বিশেষ করে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত সিনেমা ‘ন ডরাই’-তে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে নেয়। সেই ছবি দিয়েই তিনি জয় করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি।
তবে সুনেরাহ কেবল একজন অভিনেত্রী হিসেবে নয়, একজন ভাবুক, একুশ শতকের সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি মুখ না খুললেও মাঝে মাঝেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন খোলামেলা ভাষায়, যা তরুণ সমাজের কাছে হয়ে ওঠে সাহস, আত্মবিশ্বাস আর মানবিকতার বার্তা।
সাম্প্রতিক কিছু জটিল বিতর্কের মাঝেও নিজস্ব ধ্যানধারণা ও মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে সুনেরাহ এগিয়ে গেছেন নিজস্ব পথে। তার উপলব্ধি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের বিশেষ মুহূর্ত শুধু কোনো উৎসব, সাফল্য বা আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে নয়—জীবনের প্রতিটি ছোট মুহূর্ত, প্রতিটি নিশ্বাস, প্রতিটি কৃতজ্ঞতাই হতে পারে একটি বিশেষ উপলক্ষ।
যেখানে আমরা প্রায়শই ‘সঠিক সময়’-এর জন্য অপেক্ষা করি, সেখানে সুনেরাহর মতো মানুষদের উপলব্ধি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সঠিক সময় এখনই। আজই, এই মুহূর্তেই আমরা বেঁচে আছি, ভালোবাসছি, অনুভব করছি—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
সুনেরাহ বিনতে কামালের এই বার্তা আজকের প্রজন্মের জন্য যেন এক নীরব জাগরণ। প্রতিদিনই যদি হয় উদযাপন, তবে জীবনের কোনো মুহূর্তই আর সাধারণ থাকে না—সবকিছুই হয়ে ওঠে বিশেষ।