প্রকাশ: ২৮শে জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন, যা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তিনি বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘ভয়ানক ও অপমানজনক মৃত্যু’ থেকে তিনি নিজেই রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু সে কাজের জন্য তিনি কোনো ধন্যবাদ প্রত্যাশা করেন না।
ট্রাম্প শুক্রবার (২৭ জুন) নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, “আমি জানতাম তিনি (খামেনি) কোথায় লুকিয়ে ছিলেন। আমি ইসরায়েল অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে তার জীবন শেষ করতে দেইনি।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি ইঙ্গিত দেন যে, একদম পরিকল্পিত ও নিশ্চিত হামলার লক্ষ্যে থাকলেও তিনি খামেনিকে হত্যা করতে দেননি।
তার ভাষ্যমতে, “আমি তাকে একটি ভয়ানক এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছি। কিন্তু এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো দরকার নেই।” ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে যেমন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান যুদ্ধাবস্থার ভেতর বিষয়টি নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেছিলেন, “আমরা আমেরিকার মুখে একটি কঠিন চপেটাঘাত করেছি।” তার এই মন্তব্যের কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া আসে। দুই নেতার এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রমাণ করে, পর্দার আড়ালে চালানো জিওপলিটিকাল চালগুলো কতটা নাটকীয় ও সংবেদনশীল।
বর্তমানে ইরানজুড়ে এক রকম শোক এবং ক্ষোভের পরিবেশ বিরাজ করছে। শনিবার তেহরানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের জানাজায় অংশ নিতে। কিন্তু এই বিশাল আয়োজনে দেখা যায়নি আয়াতুল্লাহ খামেনিকে, যার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের দাবি হয়তো সত্য এবং খামেনির জীবন এখনো হুমকির মুখে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী এবং ১০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। প্রথম দফার হামলায় নিহত হন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি এবং প্রভাবশালী কমান্ডার হোসেইন সালামি। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখতেন।
জানাজায় ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, কুদস ফোর্সের বর্তমান প্রধান এসমাইল কানি এবং সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলী শামখানিকে দেখা গেছে। শামখানি যুদ্ধে আহত হওয়ার পর এই প্রথম জনসম্মুখে এসেছেন এবং তাকে লাঠির সাহায্যে হাঁটতে দেখা যায়, যা পরিস্থিতির গুরুতরতা স্পষ্ট করে।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান ১২ দিনের সংঘাতে ইরানে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬১০ জন, যাদের মধ্যে ১৩ জন শিশু ও ৪৯ জন নারী রয়েছেন। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০০। অন্যদিকে, ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৮ জন এবং আহতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৪৩।
এই মানবিক বিপর্যয়, বৈশ্বিক উত্তেজনা এবং নেতাদের বক্তব্য–সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি আগ্নেয়গিরির মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আর সেই পটভূমিতে ট্রাম্পের এই সাম্প্রতিক মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নতুন করে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েনে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।