প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের গোপন আস্তানায় র্যাব-১৫ এর চাঞ্চল্যকর অভিযান ও বিপুল অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (২৯ জুন) দুপুরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী উত্তর হাজিরপাড়া এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৫ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। সংবাদে বলা হয়, স্থানীয় কিছু বাঙালি ও রোহিঙ্গা মিলে একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাতদল সেখানে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করছিল।
র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই ডাকাতচক্রের সদস্যরা তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এরপর র্যাব সদস্যরা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি দেশীয় তৈরি এলজি, একটি উন্নত মানের বিদেশি এয়ার রাইফেল, ছয় রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি, তিন রাউন্ড বার বোরের তাজা কার্তুজ এবং একটি খালি গুলির খোসা উদ্ধার করে।
র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) এ.এম. ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এই অভিযান ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও তথ্যনির্ভর। গোপন সূত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করে আমরা নিশ্চিত হই যে, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ডাকাতচক্রটি সশস্ত্র অবস্থান করে আসছিল এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল।”
তিনি আরও জানান, এই ডাকাতচক্রটি শুধুমাত্র ডাকাতি নয়, বরং সীমান্ত এলাকায় মানবপাচার, অস্ত্র পাচার ও মাদক বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ও দুর্গম এই অঞ্চলে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সশস্ত্রভাবে অবস্থান করছে এবং তারা স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে মিলে একটি সুসংগঠিত চক্র গঠন করেছে। এই চক্র একদিকে যেমন বনের ভেতরে ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, অন্যদিকে আবার মানবপাচার ও অবৈধ অস্ত্র পাচারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
অভিযানে ব্যবহৃত এলাকা এবং ঘন জঙ্গল ঘিরে ফেলায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও এবার কোনও গুলিবিনিময় হয়নি, তবে গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সশস্ত্র এই গ্রুপটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হামলা বা ডাকাতির পরিকল্পনায় ছিল।
অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আরও সতর্কতা বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। র্যাব-১৫ জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পালিয়ে যাওয়া ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল আরও জোরদার করা হয়েছে যাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধচক্র পুনরায় সংগঠিত হতে না পারে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং সীমান্ত অপরাধের কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সেখানে মাঝে মধ্যেই অস্ত্রধারী চক্রের সংঘর্ষ, মাদক উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
এমন বাস্তবতায় র্যাবের এ ধরনের অভিযান জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে তারা দাবি করেছেন, শুধুমাত্র অভিযান নয়—স্থায়ীভাবে এই ধরনের সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।