প্রকাশ: ২৮শে জুন, ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেট ইতিহাসে অধিনায়কত্ব নিয়ে নানা নাটকীয়তার সাক্ষী থেকেছে দেশবাসী। সম্প্রতি সেই অধ্যায়ে নতুন একটি সংযোজন ঘটলো—নাজমুল হোসেন শান্ত নিজ থেকেই সরে দাঁড়ালেন টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে। তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো, আজকের এই সিদ্ধান্তের কথা নাকি আগে থেকে জানতই না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির শীর্ষ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেই সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ শেষে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎ করেই নাজমুল হোসেন শান্ত ঘোষণা দেন, তিনি আর বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন না। শান্তর ভাষায়, এই সিদ্ধান্ত কোনো রাগ-ক্ষোভ বা হতাশা থেকে নয়, বরং দলের স্বার্থে ও সামগ্রিক পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর মতে, তিন সংস্করণে তিনজন আলাদা অধিনায়ক রাখার যৌক্তিকতা নেই এবং দলীয় ভারসাম্য রক্ষার্থে নেতৃত্বে সংহতি থাকা উচিত।
নাজমুলের এই ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছে বিসিবি। কারণ, অন্তত প্রকাশ্যে বোর্ডের কেউই আগে থেকে এই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত পাননি। আজ টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর আগেই বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন বলেন, শান্ত আজই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন, এমন কিছু তার জানা নেই। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে শান্তর ঘোষণার পরও তার বক্তব্য ছিল একই—এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিসিবি পূর্বে অবগত ছিল না।
এই প্রসঙ্গে দুপুরে মাঠেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাজমূল আবেদীন। তাঁর কথায়, “আমরা জানতাম না, ও আজই সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কত্ব ছাড়া ঘোষণা দেবে। এ রকম কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে এটা ঠিক, এ নিয়ে একটি আলোচনা চলছিল এবং আমরা ভেবেছিলাম সফর শেষে বসে বিস্তারিত কথা হবে। আজই এমন ঘোষণা আসবে, সেটা ধারণা করিনি।”
১২ জুন বিসিবি যখন মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা দেয়, তখনই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, শান্ত কী কেবল টেস্ট দলের দায়িত্বই পালন করবেন? সেই সময় থেকেই গুঞ্জন চলছিল, তিনি টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছাড়তে পারেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, তারা তিন ফরম্যাটে তিনজন আলাদা অধিনায়ক রাখতে চায়, কারণ নেতৃত্বে পরিবর্তনের মাধ্যমে পারফরম্যান্সে উন্নতি আনা সম্ভব হতে পারে। সেই সিদ্ধান্তেই ওয়ানডে দলের দায়িত্ব মিরাজের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই শান্ত নিজে বোর্ডকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক রাখার ক্ষেত্রে তিনি একমত নন এবং সেক্ষেত্রে তিনি আর টেস্ট দলের নেতৃত্বও রাখতে আগ্রহী নন। সেই ইঙ্গিত আজ বাস্তব রূপ নিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার পর।
নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান বলেন, “তার নেতৃত্বগুণ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সে একজন ভালো অধিনায়ক। তারপরও, সে ব্যক্তিগতভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে।”
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, শান্ত হয়তো ভবিষ্যতে আবারও বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে ফিরবেন। কারণ তার মাঝে নেতৃত্বের যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে। নাজমূল আবেদীনের ভাষায়, “আমার বিশ্বাস, সে আবার একদিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবে। সে কোয়ালিটি তার মধ্যে আছে।”
এদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ হওয়া দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ও ৭৮ রানে। সিরিজের ফল ১-০ তে শ্রীলঙ্কার পক্ষে গিয়েছে। পরবর্তী টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে, বাংলাদেশে নিজ মাঠে। নতুন অধিনায়ক কে হবেন—এ নিয়ে এখনও কিছু ভাবা হয়নি বলে জানায় বিসিবি। তবে খুব শিগগিরই বোর্ড এ বিষয়ে আলোচনায় বসবে।
নাজমুল হোসেন শান্তর এই আকস্মিক পদত্যাগ বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—নেতৃত্বের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দল কতটা স্থিরতা পাবে? তার উত্তর ভবিষ্যতের কোর্টে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, শান্তর এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘোষণা নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট কাঠামো ও নেতৃত্ব চিন্তাধারার বড় এক সন্ধিক্ষণ।