সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা: ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার
সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা: ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থায় যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, তা এখন দেশের লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব নিম্ন-মধ্যবিত্ত, পেনশনার কিংবা বয়স্ক নাগরিক নিজেদের সঞ্চিত অর্থ ভবিষ্যতের নিরাপত্তা হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন নানা দিক থেকে আর্থিক চাপ অনুভব করছেন।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে আনার প্রভাব ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বিগত তিন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে এসে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ কোটিতে। এটা কেবল একটি সংখ্যার পার্থক্য নয়, বরং সমাজের এক বড় শ্রেণির অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরও প্রভাব ফেলছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকোচনমূলক বাজেট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত এক ধরনের নীতিগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের প্রস্তাব বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, ফলে সাধারণ মানুষ ঝুঁকছে ব্যাংক ও প্রাইভেট বন্ড মার্কেটের দিকে। এতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ দ্রুত কমে যাচ্ছে।

সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করেই সংসার চালায়। সেখানে সুদ কমে যাওয়ায় তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সরকারের উচিত ব্যাংক ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী হওয়া।”

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী জানান, আইএমএফ-এর শর্ত বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি ও জীবিকার চাপের কারণে মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছে। আগে যেখানে মানুষ প্রাইজবন্ডের মতো ঝুঁকিহীন পদ্ধতিতে সঞ্চয় করত, এখন সেই আগ্রহও হারিয়ে ফেলছে। সঞ্চয়পত্রের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই মনে করেন তিনি।

আইএমএফ-এর ঋণপত্রে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র থেকে গ্রহণ করা যাবে না। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারিত হবে বাজারভিত্তিক ট্রেজারি বিলের হারের সঙ্গে মিলিয়ে। গত ছয় মাসে ট্রেজারি বিলের সুদ কমে যাওয়ায়, সেই অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের সুদও কমানো হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচের সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১২.৫৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১.৮২ শতাংশ এবং তার ওপরে বিনিয়োগে ১২.৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১.৭৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমন সিদ্ধান্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সঞ্চয়পত্রকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তার অংশ মনে করলেও আইএমএফ একে দীর্ঘমেয়াদি সরকারী দায় হিসেবে বিবেচনা করছে। ফলে প্রতিবছর সরকারের সুদ পরিশোধের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।”

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ দেওয়ার ফলে দেশের আর্থিক কাঠামো বিশেষ করে বন্ড মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক বেসরকারি কোম্পানি উচ্চ সুদের কারণে বাজারে বন্ড ইস্যু করতে আগ্রহ হারাচ্ছে। অথচ একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ সম্ভব নয়।

এরই মাঝে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিকল্প ভাবনা ভাবছে। প্রস্তাব আসছে অবসরভোগীদের জন্য পেনশন সুবিধা বাড়ানোর এবং নিম্নবিত্তদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ চালুর। কিন্তু এসব এখনো পরিকল্পনার স্তরে আছে, বাস্তবায়নের কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা এখনও সামনে আসেনি।

এই প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব এখন দ্বিধান্বিত। একদিকে কম সুদ, অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ—এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে তারা ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এক সময়ের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম সঞ্চয়পত্র থেকে। ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া