প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বর্তমান দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনকে ‘অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার মতে, একটি অন্তঃসারশূন্য, একপাক্ষিক ও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বরং সবার অংশগ্রহণে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র দেশের সংকটের পথ খোঁজা সম্ভব।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। পাটগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পাটগ্রাম আমাদের চোখের সামনে। দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এখন এতটাই গভীর যে, এ অবস্থায় কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের চিন্তা করা বাস্তবসম্মত নয়।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “যে পরিবেশে জনগণ ভয়ভীতির মধ্যে থাকে, সেখানে ভোটাধিকার অর্থহীন হয়ে পড়ে। আমরা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু তার আগে পরিবেশ তৈরি করাটা অপরিহার্য। এজন্য আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি, যা নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারে।”
তিনি মনে করেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই সংস্কার অপরিহার্য। দেশের মানুষ এখন আর কেবল ‘নির্বাচনের আয়োজন’ নয়, বরং প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকার দেখতে চায়—যেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হবে এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা জামায়াতে ইসলামি সবসময়ই সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমরা কখনোই ‘মব পলিটিক্স’-এ বিশ্বাস করি না। ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি এবং এখনও একই অবস্থানে রয়েছি।”
তিন দফা নির্বাচন, রাজনৈতিক নিপীড়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আন্তরিকভাবে দেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে চাইলে সরকারসহ সব পক্ষকে সমঝোতার টেবিলে বসতে হবে। সেই আলোচনার মাধ্যমেই গণতন্ত্রের পথ সুগম হবে।”
সৈয়দপুর থেকে রওনা হয়ে বিকাল ৩টায় ডা. শফিকুর রহমান রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াতের এক বিশাল জনসভায় অংশ নেন। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “সংবিধান ও গণতন্ত্রের নামে যদি আবারও একপক্ষীয় ভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, তবে তা কেবল অস্থিতিশীলতা ও প্রতিরোধই ডেকে আনবে। সেই ভুল আর করা যাবে না।”
তার মতে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক এবং সর্বোপরি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে যে পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংস্কার দরকার, তা বিলম্ব না করে এখনই শুরু করতে হবে।
এই বার্তাই তিনি দেশের সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে পৌঁছে দিতে চান বলেও উল্লেখ করেন।