প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
কখনো কখনো বাস্তবতা হয়ে ওঠে কল্পনার চেয়েও কঠিন। বিশেষ করে যখন একটি সম্পর্ককে ঘিরে মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে, তখন সেই সম্পর্কের ভাঙন এক ব্যক্তিগত ক্ষতির চেয়েও অনেক বড় কিছু হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনই এক সম্পর্কের গল্প তাহসান-মিথিলার, যাদের দাম্পত্য জীবনকে বহু মানুষ নিখুঁত ভালোবাসার উদাহরণ হিসেবে দেখতেন।
২০০৬ সালের ৩ আগস্ট ভালোবাসা থেকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান এবং অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। দীর্ঘ ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের একমাত্র কন্যা আইরা তেহরীম খান আসে পৃথিবীতে। এই দম্পতির স্নিগ্ধ উপস্থিতি যেমন পর্দায় ছিল, তেমনি বাস্তব জীবনেও ছুঁয়ে গিয়েছিল অসংখ্য হৃদয়। তাই ২০১৭ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা যখন আসে, সেটি ছিল অনেকের কাছে শোকের সংবাদ।
দাম্পত্যের ভাঙন পরবর্তী সময়ে কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়াই শান্তভাবে আলাদা থাকলেও, দীর্ঘ সময় পরে মিথিলা প্রকাশ করলেন সেই সময়কার মানসিক যন্ত্রণা ও সংগ্রামের কথা। সম্প্রতি এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে তিনি জানান, তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতাগুলোর একটি।
মিথিলা বলেন, “আমার বয়স তখন খুব বেশি ছিল না। এক বছরের একটা ছোট বাচ্চা ছিল আমার কোলে। সেই সময়টায় আমি এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি আমার ছিল না। আমার মন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না যে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।”
তিনি জানান, ২৩ বছর বয়স থেকে জীবনের যে ছবিটা আঁকছিলেন তিনি, সেই ছবির রঙ এক মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে, সংসার-সন্তান নিয়ে যে ভবিষ্যতের কথা ভেবেছিলেন, সেটি হঠাৎ করেই বদলে যায়। “আমি জানলাম, সেই জায়গাটা আমার ভবিষ্যত নয়। আমার গাড়ি ছিল না, অথচ আমি এবং আমার বাচ্চা দুজনেই ছিলাম গাড়িতে অভ্যস্ত। নিজের একটা ঠিকানা, নিরাপত্তা কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে তখন কিছুই ছিল না নিশ্চিত।”
মিথিলা বলেন, সেই সময়টা ছিল এমন এক পর্ব, যখন তিনি অর্থনৈতিকভাবে পুরোপুরি স্বাধীন ছিলেন না। যদিও বিয়ের পরও তিনি নিজের পড়াশোনা ও চাকরি চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তবু একা সন্তান মানুষ করার মতো আত্মবিশ্বাস তখনো গড়ে ওঠেনি। আর এ কারণেই তিনি বহুদিন ধরে ভেবেছেন, হয়তো এই সম্পর্কটা আবার জোড়া লাগবে। “২০১৫ সালে আমরা আলাদা হই, কিন্তু আমি অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে বুঝলাম, আসলে এই সম্পর্ক আর টিকবে না।”
এই আলাদা হয়ে যাওয়ার মধ্যেও মিথিলা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন নারীদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতার গুরুত্ব। “মেয়েদের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার জন্য আর্থিক স্বাবলম্বিতা অত্যন্ত জরুরি। আমার মা সব সময় বলতেন, নিজের পায়ে দাঁড়াও। আমি চেষ্টা করেছি সেটাই করতে।”
তাহসান ও মিথিলা একসময় শুধু দাম্পত্য জীবনেই নয়, বরং নাটক, গান ও শিল্পচর্চার মঞ্চেও ছিলেন এক সফল জুটি। ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’সহ বহু নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তারা। একসঙ্গে গানও গেয়েছেন, ভাগ করে নিয়েছেন শিল্পের অনুভব।
তবে আজ, অনেক বছর পর, সেই ভাঙনের গল্প শুধুই দুঃখের নয়— সেটি আত্মজয়েরও গল্প। সাহস করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার, নিজের জায়গা গড়ে তোলার। আজকের মিথিলা শুধু একজন অভিনেত্রী বা সমাজকর্মী নন— তিনি হয়ে উঠেছেন ভাঙনপথ পেরিয়ে বেঁচে ওঠা একজন নারীর অনুপ্রেরণার প্রতীক।