সর্বশেষ :
বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি থমকে আছে কেন চাঁদাবাজির অভিযোগে গাজীপুরে বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার হলেন দুই ছেলে স্বাবলম্বী, তবুও মা-বাবাকে থাকতে হচ্ছে গোয়ালঘরে কেমন লাগল বিল গেটসের কাঁঠালের জাতভাই ডুরিয়ান খেয়ে? ‘বাংলা ব্লকেড’ শুরু, রাজধানী স্থবির গফরগাঁওয়ে ট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২ ট্রিপল সেঞ্চুরিতে নতুন রেকর্ড গড়লেন অধিনায়ক উইয়ান মুল্ডার পশ্চিমতীরের স্বঘোষিত ‘হেবরন আমিরাত’: ফিলিস্তিনি সংগ্রামের বিরুদ্ধে নতুন বন্যা গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহু নারায়ণগঞ্জে তুহিন হত্যা মামলায় আইভীকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি থমকে আছে কেন

একটি বাংলাদেশ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫
  • ৩ বার

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৩৮

বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের নারীরা

বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তারা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো করছেন। প্রথম আলোর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের (জিইএম) তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এখন পৃথিবীতে ৬৫ কোটি নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাঁদের অনেকে নিজের উদ্যোগেই ধনী হচ্ছেন, আর কেবল স্বামী বা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার হিসেবে নয়। এটি নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক ইঙ্গিত।

তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছবিটি ততটা উজ্জ্বল নয়। দেশের ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার মধ্যে নারী উদ্যোক্তার হার মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে। যদিও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের তথ্য জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী, তবুও সামগ্রিক অংশগ্রহণ তুলনায় খুবই কম।

নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতির পথে বাধাগুলো বহুমুখী। আমাদের সমাজে নারীকে এখনো পরিবার ও আর্থিক কাঠামোতে পুরুষের ওপর নির্ভর করেই এগোতে হয়। বিশেষ করে নতুন কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষের নেতিবাচক মনোভাব, সহিংসতার আশঙ্কা এবং সামাজিক কটাক্ষ নারীকে দমিয়ে রাখে। বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীর সীমাবদ্ধতা। জমি-জমা বা সম্পদের মালিকানা নারী নিজে না থাকায় প্রায়শই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে হিমশিম খেতে হয়।

শিক্ষা ব্যবস্থাতেও নারীর অবস্থান তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিকে মেয়েশিক্ষার্থীর হার এখনো ৫৫ শতাংশের আশেপাশে থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে তা ৫০ শতাংশে নেমে আসে। উচ্চশিক্ষায় এই হার আরও কমে ৩৭ শতাংশের সামান্য বেশি থাকে। দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, সামাজিক বাধা এবং পরিবারিক সহায়তার অভাবই এই পেছিয়ে থাকার মূল কারণ। ফলে কর্মসংস্থানের দুনিয়াতেও নারীর অংশগ্রহণ সীমিত থেকে যায়।

বর্তমানে যখন দেশের চাকরির বাজার সংকুচিত, তখন আত্মকর্মসংস্থান হতে পারে বড় সমাধান। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তের ক্ষুদ্রঋণ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে সমস্যা রয়ে যাচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত নারীদের নিয়ে। উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতক পাশ করে তারা প্রায়শই আর্থিক মূলধনের অভাবে উদ্যোক্তা হতে পারছেন না। অনেকে সীমিত পুঁজিতে ফেসবুক বা অনলাইন ভিত্তিক ছোটখাটো ব্যবসা করছেন, যা বড় পরিসরে রূপান্তর করা তাদের পক্ষে কঠিন।

একইসাথে দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তারা প্রায়ই অল্প মুনাফাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। বাজারে টিকে থাকতে গিয়ে তারা কম ঝুঁকি নেন, ফলে বড় বিনিয়োগে হাত দিতে পারেন না। বিপরীতে পুরুষ উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা সহজেই পেয়ে বড় আকারের ব্যবসা গড়ে তোলেন। এতে নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তার মধ্যে সম্পদের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষিত নারীও উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হলেও সঠিক দিকনির্দেশনা ও মূলধনের অভাবে তারা থমকে যাচ্ছেন। অনেকেই উচ্চশিক্ষা শেষ করে বিয়ের পর পরিবারিক দায়িত্বে জড়িয়ে আর পেশাজীবী বা উদ্যোক্তা হতে পারছেন না। ফলে দেশের বৃহৎ একটি শিক্ষিত নারীশ্রেণি অলিখিতভাবে গৃহবন্দি হয়ে যাচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য এক ধরনের অপচয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের উচিত শিক্ষিত নারীর জন্য বিশেষ সহায়তা প্যাকেজ ও সহজ শর্তের ঋণ নিশ্চিত করা। নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে গড়া প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির মালিকানা ব্যাংক বা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে জামানত হিসেবে রাখা গেলে ঋণ অনাদায়ী হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। পাশাপাশি প্রযুক্তি খাত, ওষুধশিল্প, নির্মাণ খাত, সরবরাহ ব্যবস্থা, অফিস ও গৃহসজ্জা—এমন বহু ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাংলাদেশেও নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে শুধু নারী নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সমাজে মানবিকতা ও সমতার চর্চা, পরিবারিক সহায়তা আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তবসম্মত উদ্যোগই পারে নারী উদ্যোক্তাদের পথের শৃঙ্খলগুলো একে একে ভাঙতে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন মানেই দেশের সার্বিক অগ্রগতি—এ সত্যটি অনুধাবন করাই এখন সময়ের দাবি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া