প্রকাশ: ০৬ জুলাই’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিতে—যা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থানকেই দৃঢ় করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালায় একটি যুগোপযোগী পরিবর্তনের পথ তৈরি করবে। এই লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ২০২৫’ নামে একটি নতুন অধ্যাদেশের খসড়া, যা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
এই আইনের কার্যকরতা মানে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর শুধু একটি নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ দপ্তর নয়—বরং এটি পরিণত হবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক স্তম্ভে। এর ফলে ব্যাংকটির কার্যক্রমে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের বিতর্কিত অধ্যায় শেষ হয়ে যেতে পারে এবং শুরু হতে পারে একটি স্বচ্ছ, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার।
নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল কার্যক্রমের জবাবদিহিতা থাকবে কেবল জাতীয় সংসদের কাছে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে আরও স্বচ্ছ—সংসদের অনুমোদন ও প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পাবেন তারা। শুধু তাই নয়, দায়িত্ব গ্রহণের আগে শপথ নিতে হবে দেশের প্রধান বিচারপতির সামনে—যা এই নতুন মর্যাদার প্রতীকী ও কার্যকরী স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ব্যাংকটি আর্থিক ও প্রশাসনিকভাবে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত হবে। অর্থাৎ, দেশের সমস্ত বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতি নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকবে ব্যাংক নিজেই, যেখানে সরকারের কোনো তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ থাকবে না।
অর্থনীতিবিদ ও নীতি-নির্ধারকরা একে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এর ফলে বাংলাদেশের আর্থিক অবকাঠামো শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক খাতেও দেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। একইসাথে, দেশীয় ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে, কারণ এটি হবে একটি স্বাধীন এবং স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা।
সরকারের এই উদ্যোগকে অনেকেই বলছেন “অর্থনৈতিক নীতিমালায় দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার”, যেখানে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে আইনটির খসড়া পর্যালোচনা করে এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যেই এই আইন অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হলে তা হবে একটি বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে একটি নতুন অর্থনৈতিক অধ্যায়ে—যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হবে সত্যিকারের আর্থিক নিয়ন্ত্রক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক।