প্রকাশ: ০৯ই জুন’ ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর মধুপুর ইউনিয়নে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপ্রত্যাশিত পালাবদলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মোকসেদুল হক মাস্টার এবার বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মধুপুর ইউনিয়নের একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন যে, মোকসেদুল হক মাস্টার দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে দাপটের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির সদস্যরা দাবি করেন, গত জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের আশ্রয় নেন।
উপজেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শামীম এ ঘটনাকে বিএনপির জন্য “অপমানজনক” বলে উল্লেখ করে বলেন, “যারা দলের দুর্দিনে পাশে ছিলেন না, তাদেরকে কীভাবে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া যায়? এটি দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র মাত্র।”
বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কমল লোহানী আরও গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি দখলের চেষ্টা করছেন। এর পেছনে জেলা পর্যায়ের কিছু অসাধু নেতার যোগসাজশ থাকতে পারে।”
এদিকে, বিতর্কিত প্রার্থী মোকসেদুল হক মাস্টার তার সিদ্ধান্তকে “নিজের রাজনৈতিক জীবনের পুনর্বাসন” বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমি একজন শিক্ষক। স্কুলের স্বার্থে আমাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপিতে যোগ দিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে বলেন, “নির্বাচন কমিটি বিষয়টি তদন্ত করবে।” তবে নির্বাচন বাছাই কমিটির সদস্য লিটন পারভেজসহ অন্য নেতাদের কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও নেতৃত্ব সংকটেরই প্রতিফলন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ ঘটনাকে “বিএনপির নৈতিক অধঃপতন” বলে বর্ণনা করেছেন।
একটি বাংলাদেশ অনলাইন এর খোঁজ নিয়ে জানায়, গত কয়েক মাসে রংপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির কিছু নেতার বিএনপিতে যোগদান এবং তাদের প্রভাব বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিতর্কিত প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি, যদি মোকসেদুল হক মাস্টারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে তা দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।