প্রকাশ: ১২ই জুন, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের আচরণকে “অপ্রত্যাশিত ও অসহযোগী” বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, ইরান দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না, যতক্ষণ না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত সকল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এই অবস্থায় মাস্কাটে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী আলোচনাই নির্ধারণ করবে পুরো প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ।
এই সংকট নিরসনে রাশিয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইরান দ্বারা উৎপাদিত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে এই প্রস্তাবেও ইজরায়েলের সম্মতি নেই বলে জানা গেছে। ফলে আলোচনা এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ইজরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রিম না জানিয়েই এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইজরায়েল সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে এই হামলা চালাতে পারে, যা ইতিমধ্যে তাদের বিমানবাহিনীর মহড়ায় দেখা গেছে। সিরিয়া ইজরায়েলকে এই সুবিধা দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান একটি বড় ধরনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে ইজরায়েলের গোপন পরমাণু ও সামরিক কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তারা হস্তগত করেছে। এই তথ্যের মধ্যে রয়েছে:
ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত গোপন নথি
মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরাইলের গোপন সম্পর্ক
ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনার সঠিক অবস্থান
ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তির গোপন বিবরণ
পরমাণু কর্মসূচিতে জড়িত ইসরাইলি বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের তালিকা
ইরান এই তথ্যগুলোর একটি অংশ জনসমক্ষে প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া, গবেষণার জন্য দেশীয় সংস্থাগুলোকে, সেনাবাহিনীর একটি অংশকে এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে এই তথ্য বিনিময় করা হতে পারে। বিশেষ করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে এই তথ্য শেয়ার করা হলে ইজরায়েলের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি হতে পারে।
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নতুন করে চাপ তৈরি করেছে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে যে ইরান গোপন তথ্য চুরি করে IAEA-এর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এর জবাবে ইরান IAEA-এর সঙ্গে করা সমস্ত চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।
এদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের মিসাইল সিস্টেম সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সম্প্রতি তারা তাদের ভূগর্ভস্থ মিসাইল সাইটের ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিপক্ষকে সতর্ক করেছে যে কোনো হামলার জবাব তারা দেবে। ইরান ২ টন পেলোড বহনক্ষম মিসাইল পরীক্ষা করেছে এবং একাধিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, যা তাদের টার্গেটিং সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরক্ত তাদের কূটনৈতিক ও সামরিক কর্মীদের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ইরাক ও অন্যান্য দেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া, সেনা পরিবারদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যেকোনো সময় উত্তেজনা বাড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইজরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধের সূচনা করতে পারে। ইরান ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে তারা মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। অন্যদিকে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে, ইজরায়েল কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করে। যদি হামলা হয়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।