সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

জীবন্ত মানুষকে মাটিচাপা: মাগুরায় নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্রে স্তম্ভিত জনতা

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
  • ২৫ বার

প্রকাশ: ২৪শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

বাংলাদেশের মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায় ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক এবং বিভৎস ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চরম উদ্বেগ ও হতবাক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এক তরুণকে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার পর জীবন্ত অবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে রাখার মতো নির্মম ও পশুসুলভ ঘটনার বিবরণ শুনলে যে কেউ স্তম্ভিত হয়ে যাবেন।

জানা গেছে, ওই তরুণের নাম কমিরুল মোল্যা। স্থানীয় সূত্র এবং সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ ও ‘কালবেলা’র অনুসন্ধান অনুযায়ী, একদল দুর্বৃত্ত প্রথমে তাকে লক্ষ্য করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা চালায়। একটি গামছা ব্যবহার করে তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। এরপর মৃত ভেবে তার দেহকে একটি নির্জন স্থানে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।

এই ঘৃণ্য কাজের পরও অপরাধীরা নিশ্চিত হয়নি যে তাদের শিকার পুরোপুরি মারা গেছে কিনা। কিন্তু ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হলো, কমিরুল তখনো বেঁচে ছিলেন। মাটির নিচে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার একটি পা উপরে বেরিয়ে ছিল—এই ক্ষীণ চিহ্নই হয়ে ওঠে জীবন ফিরে পাওয়ার অনুঘটক।

একটি শিশু এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে চিৎকার করে এলাকাবাসীকে খবর দেয়। তখন দ্রুত লোকজন ছুটে এসে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে ওই যুবককে। সবার অবাক বিস্ময়—তাকে জীবিত অবস্থাতেই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই ভয়াবহ ঘটনাটি শুধুমাত্র ব্যক্তি কমিরুলের জীবনঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা নয়—এটি বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতার ভয়াবহ অবক্ষয়ের এক প্রতীকচিত্র হয়ে উঠেছে। এই ধরনের ঘটনা মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এবং সভ্য সমাজে এ ধরণের অমানবিকতার কোনো স্থান নেই বলেই মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

এই ঘটনার পর স্থানীয় জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কী কারণে, কারা এভাবে কমিরুলকে হত্যাচেষ্টা করল—তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এমন ভয়াবহ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন কতটা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে?

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত এমন অনেক ঘটনা ঘটছে, যা হয় ধামাচাপা পড়ে যায়, নয়তো বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার হয়। একটি জীবন নিয়ে এমন নির্মম খেলা, যেখানে একজন মানুষকে মৃত ভেবে মাটি চাপা দেওয়া হয়—এটি শুধু আইন লঙ্ঘনের বিষয় নয়, এটি একটি জাতির নৈতিকতা ও মানবিকতার চরম পতনের পরিচয় বহন করে।

দেশজুড়ে এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকেই এই ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—“আমরা কোথায় বাস করছি?”—এ প্রশ্ন এখন শুধু আবেগের নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের আত্মপরীক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কমিরুলের মতো ভাগ্যবান কেউ হয়তো মাটির নিচ থেকে জীবিত ফিরতে পারে, কিন্তু প্রতিদিন যারা গুম, খুন বা লুকোনো সহিংসতার শিকার হচ্ছেন—তারা কোথায়? তাদের জন্য রাষ্ট্র কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?

এই ঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে, এই ধরনের বর্বরতা আরও উৎসাহিত হবে—এমন শঙ্কাই এখন সাধারণ মানুষের মনেও গভীরভাবে দানা বাঁধছে।

এই মুহূর্তে প্রয়োজন, প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ, স্বাধীন তদন্ত, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং একইসঙ্গে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। কারণ, একটি সভ্য রাষ্ট্রে জীবন্ত মানুষকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা আর কোনোভাবেই ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এটি জাতিগত কলঙ্কের নামান্তর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া