সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

ইরানে মোসাদ-বিরোধী ব্লিট্‌জ: যুদ্ধের ছায়ায় গণগ্রেপ্তার, দ্রুত ফাঁসি এবং ‘গুপ্তচরবৃত্তি দমন’ অভিযানের আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ২৯ বার

প্রকাশ: ২৫শে জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

তেহরানের নতুথাকাপড়া ভোরে‌ই গুজবটা ছড়িয়ে পড়েছিল—আরও কয়েকজন ‘ইসরায়েলি গুপ্তচর’কে ভোর চারটেয় রাজকোট জেলখানার আঙ্গিনায় নিয়ে গেছে বিপ্লবী আদালতের নিরাপত্তা শাখা। সকাল না হতেই আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো শিরোনাম করল: ইরান তিন জনকে মোসাদের হয়ে কাজ করার দায়ে ফাঁসি দিয়েছে। ইরানের সরকারি সংবাদ মাধ্যম মিজানও নিশ্চিত করল খবরটি; বিচার ছিল দ্রুত, আপিলের পথ বন্ধ, দণ্ড কার্যকর হয়েছে অতি গোপনে।

এই ফাঁসি সাম্প্রতিক সপ্তাহে একই অভিযোগে হওয়া তৃতীয় দফা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর; এর আগে খুজেস্তান প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত সাতজন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বলে সরকারি সূত্র জানায়। রাষ্ট্র দাবি করছে—“এরা সবাই মোসাদের প্রশিক্ষিত নেটওয়ার্কের সদস্য; যুদ্ধাবস্থার সুযোগে সামরিক স্থাপনা ও পরমাণু স্থাপনায় নাশকতার ছক ছিল।”

ইরানের নিকট‌ সরকারপন্থি নৌর নিউজ ও রাষ্ট্রসংবাদ সংস্থা ইরনায়া প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‌বারো দিনের যুদ্ধকালীন পর্বে “ইসরায়েলের সুবিধার্থে কর্মকাণ্ডে যুক্ত”—এমন অভিযোগে ৭০০ জনের বেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

খুজেস্তান প্রদেশের প্রসিকিউটর অফিস পাঁচ দিন আগে ঘোষণা করে, ওই অঞ্চলে আলাদা অভিযানে মসাদ-সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন ধরা পড়েছে; তাদের কাছ থেকে ড্রোনের যন্ত্রাংশ, স্যাটেলাইট ফোন ও “বিদ্বেষমূলক প্রচারসামগ্রী” উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি।

ইরান-ইসরায়েল ১২-দিনের সরাসরি সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রোকর্ড যুদ্ধবিরতিতে মাত্রই স্বাক্ষর হয়েছে, কিন্তু তেহরান বলছে—“গুপ্তচরবৃত্তি দমন” এখন তাদের জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট পুরহামাদি টেলিভিশনে বলেন, “আমাদের ভূমিতে যারা শত্রুর এজেন্ট, তাদের জন্য কেবল একটাই পরিণতি—বিচার ও প্রতিকার।”

তবে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতির ঠিক পরেই এই ‘ব্লিট্‌জ-অ্যাকশন’ আসলে ভিন্নমতকারীদের দমনে কাজে লাগছে; বহু গণমাধ্যমকর্মী, ছাত্রনেতা ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মীও “ইসরায়েলের হয়ে তথ্য পাচারের” অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো assert করছে। ফ্রান্স-২৪-এর এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরান রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করতে বহির্শত্রু ‘মোসাদ’ আখ্যাটি পুরোনো কায়দায় ব্যবহার করছে।

আন্তর্জাতিক আইনজীবী সংগঠন ‘রিডডুম’ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ বিবৃতিতে লিখেছে, “ইরানে গুপ্তচরবৃত্তির মামলাগুলোর বেশির ভাগই রুদ্ধদ্বার; স্বীকারোক্তি আদায়ে দীর্ঘ একাকী আটকাবস্থার অভিযোগ পাওয়া যায়, উচ্চ আদালতে স্বাধীন আপিলের সুযোগ নেই।” টাইমস অব ইসরায়েলের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে—যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাদের একজনের পেশাগত পরিচয় ছিল ট্রাকচালক, অন্যজন বেসরকারি টেলিকম কর্মী; পরিবারগুলো শেষবার দেখতে পায়নি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই মৃত্যুদণ্ডকে “বারবার প্রমাণিত ইরানি বর্বরতার নতুন অধ্যায়” বলে মন্তব্য করেছেন; বিপরীতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আব্দুল্লাহিয়ান পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, “যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র ইহুদি সন্ত্রাসী বাহিনীর এজেন্টদের কঠোর শাস্তি পাওয়া ন্যায়সংগত”।

যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পৃথক বিবৃতিতে ‘বিচার ও প্রমাণের স্বচ্ছতার’ অভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জরুরি বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুলেছে।

আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানে দাবি, গত পাঁচ বছরে ইরানে ঘোষিত “মোসাদ-ঘনিষ্ঠ নাশকতার” মামলার সংখ্যা শতাধিক, কিন্তু ক’টির তদন্ত প্রতিবেদন সবার সামনে এসেছে—তা অস্পষ্ট। ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলেন, “ইরানের পরমাণু ও সামরিক কর্মসূচিতে অন্তত কয়েক ডজন সফল নাশকতা মসাদ করেছে”—যার উদাহরণ ২০২১-এর নাতাঞ্জ সাইবার-বিস্ফোরণ।

ক্রমবর্ধমান ফাঁসি ও গণগ্রেপ্তার ইরানের বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজে নতুন আতঙ্ক জাগাচ্ছে। তেহরানের রাস্তায় সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সশস্ত্র ‘বাসিজ’ মিলিশিয়া। গোপন সূত্রে জানা যায়, কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত প্রদেশে স্থানীয় যুবকদের সামরিক আদালতে তলব করা হচ্ছে—“বিদেশি গোয়েন্দার পক্ষে সাইবার প্রচারণা” অভিযোগে।

পাশাপাশি, যুদ্ধ শেষে ডিজিটাল অবরোধ খানিক শিথিল হলেও অনলাইন পর্যবেক্ষক সংগঠন ‘নেটব্লক্স’ বলছে, গুগল ড্রাইভ, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের নির্দিষ্ট সার্ভার ফের ব্লকড; সরকার মনে করছে এগুলো ‘গোপন কোড’ চালাচলায় ব্যবহার হচ্ছে।

ইরান সরকার ‌বলছে—রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সবার আগে; ইসরায়েল-সমর্থিত গুপ্তচরবৃত্তি যত দ্রুত দমন হবে, ততই সার্বভৌমত্ব অটুট থাকবে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলের চোখে—এই দমনযজ্ঞ নেপথ্যে নাগরিক স্বাধীনতার কফিনে আরেক দফা পেরেক ঠুকে দিচ্ছে।

একদিকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অর্থনীতি সামাল দিতে হিমশিম তেহরান, অন্যদিকে কঠোর নজরদারি ও মৃত্যুদণ্ডের বাড়তি চাপ। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন—গুপ্তচর দমনের আড়ালে যদি সামরিকীকরণ ও রাজনৈতিক নিপীড়ন তীব্র হয়, তবে তাতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নয়, বরং নতুন অস্থিরতার বীজই পুঁততে পারে।

আপাতত দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রশ্নটা আগুনের মতো ছড়াচ্ছে—ইরানের কারাগারে পরের ফাঁসি কবে? আর কতজন? সংহতি, নিন্দা আর সাইবার-হ্যাশট্যাগের বাইরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ কি কার্যকর কোনও ব্রেক লাগাতে পারবে? নাকি যুদ্ধের ছায়ায় জন্ম নেওয়া এই ‘মোসাদ-বিরোধী ব্লিট্‌জ’ টিকেই যাবে, আরও অনেক রুদ্ধদ্বার বিচারের লাইনে দাঁড় করিয়ে? — উত্তর ভবিষ্যতের কোর্টেই অপেক্ষমাণ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া