সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক সংকট মোকাবেলায় কৌশলী পদক্ষেপে বাংলাদেশ: গম ও উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৬ বার
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক সংকট মোকাবেলায় কৌশলী পদক্ষেপে বাংলাদেশ: গম ও উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত

প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আকস্মিকভাবে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের চাপ সামাল দিতে কৌশলী কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চলমান এই বাণিজ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের সদ্য আরোপিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই পদক্ষেপগুলো মূলত একটি সমন্বিত কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে আগামী ২৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে ঢাকা নিজেদের পক্ষে কৌশলগত সুবিধা আদায়ের পথ প্রশস্ত করতে চায়।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এতে করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫২ শতাংশে। যদিও ৯ এপ্রিল এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সাময়িকভাবে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। সেই সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে মাঠে নেমেছে ঢাকা।

এই প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসান। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে তুলনামূলক কম দামে গম সংগ্রহ সম্ভব, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের গমের উচ্চমান, নিরাপদ সরবরাহব্যবস্থা এবং কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক হিসেবে দেখছে সরকার।

এছাড়াও, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বোয়িং কোম্পানি থেকে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করবে এবং ইতিবাচক বার্তা দেবে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিমান খাতে নতুন উড়োজাহাজ সংযোজনও দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় বহরের আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে।

এই দুই প্রধান উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে, যা দেশের পোশাকশিল্পে কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন যোগান নিশ্চিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR) অফিস এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে একাধিক পর্যায়ে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে মার্কিন কৃষিপণ্য ও ধাতব স্ক্র্যাপের ওপর শূন্য শুল্ক বহাল রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসাসামগ্রীর ওপর আরোপিত শুল্ক ৫০ শতাংশ হ্রাস করার বিষয়টিও বাংলাদেশ সরকার বিবেচনায় আনতে প্রস্তুত।

চলতি বছর ২১ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ছয়টি বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়, যার জবাব বাংলাদেশ দেয় ৪ জুন। এরপর ১৭ জুন দুই দেশের প্রতিনিধির মধ্যে এক অনলাইন বৈঠকে পাল্টা শুল্ক বিষয়ক একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এই খসড়াটি এখনো গোপনীয় এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য নয়। তার ভাষায়, “আমরা এখন দর-কষাকষির একটি সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছি।”

বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে আলোচনায় যেসব দেশ যুক্ত রয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে এগিয়ে। ইন্দোনেশিয়া ও আরও কিছু দেশ ইতোমধ্যে আলোচনার টেবিল থেকে সরে গেছে, যা বাংলাদেশের জন্য কৌশলগতভাবে লাভজনক হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত এক দশকে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার, যেখানে একই সময় আমদানি বেড়েছে মাত্র ১২৫ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য, আর আমদানি করে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে ৬১৫ কোটি ডলারের একটি বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বাংলাদেশের অনুকূলে অবস্থান করছে, যা পাল্টা শুল্ক আরোপের মূল ভিত্তিগুলোর একটি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে ৯ জুলাইয়ের চূড়ান্ত ঘোষণার ওপর। এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তবে পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।”

সার্বিকভাবে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যে বহুমুখী কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক তৎপরতা চালাচ্ছে, তা দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে একটি কার্যকর ও কৌশলী অবস্থান প্রতিষ্ঠার সাক্ষ্য বহন করছে। ২৯ জুনের বৈঠকে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হলে একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়বে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প ও কৃষিপণ্যও পাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। তাই আসন্ন দিনগুলোতে এই আলোচনার ফলাফল বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া