প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা, যা আবারও দেশের মহাসড়কে চলমান নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরলো। সোমবার ভোরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব ধামসর গ্রামের সোনার বাংলা স্কুল সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে পেছন দিক থেকে আরেকটি দ্রুতগতির ট্রাক ধাক্কা দিলে ট্রাকের হেলপারসহ দুইজন নিহত হন। দুর্ঘটনার তীব্রতায় ঘটনাস্থলেই একজন প্রাণ হারান, অপরজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত দুইজনের একজন হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাধীন বর্গির চর এলাকার বাসিন্দা ট্রাক হেলপার সোহেল (২০)। অপরজন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মাদারশী এলাকার ইউপি সদস্য দুলাল হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদার (৩০), যিনি দুর্ঘটনার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার ভোররাতে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একটি টাইলসবোঝাই ট্রাক। তখন পেছন দিক থেকে আসা আরেকটি আমবোঝাই ট্রাক সেই ট্রাকটিকে দ্রুতগতিতে এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় আমবোঝাই ট্রাকের হেলপার সোহেল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ধাক্কায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী সবুজ গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে প্রথমে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে, সকালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবুজের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে গৌরনদী হাইওয়ে থানার এসআই মো. শরীফ জানান, দুর্ঘটনার সময় টাইলসবোঝাই ট্রাকটি ঢাকার মিরপুর থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিল, অন্যদিকে আমবোঝাই ট্রাকটি আসছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। দুটি ট্রাকের সংঘর্ষের পরপরই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আমবোঝাই ট্রাকের চালক এবং টাইলসবোঝাই ট্রাকের চালক ও হেলপার দ্রুত পালিয়ে যায়। তাদের শনাক্ত ও আটকের জন্য অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম নিশ্চিত করেন, নিহত সবুজ হাওলাদারের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই দুর্ঘটনা ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের জন্য কোনও সতর্কসংকেত বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। নিয়মিত নজরদারি ও চালকদের প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে বলেও তারা দাবি করেন।
সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একদিকে যেমন দায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে, তেমনি প্রয়োজন মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের অবস্থান যথাযথভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা চালু করা। পাশাপাশি দীর্ঘপথে ট্রাক চালকদের ক্লান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও অনভিজ্ঞতা অনেক সময় এমন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বরিশাল অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে এটি ছিল অন্যতম বড় সড়ক দুর্ঘটনা, যা দুইটি মূল্যবান প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এমন মৃত্যুর ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবহন মালিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়মিত যানবাহন পরিদর্শন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামের ব্যবস্থা এবং কার্যকর নজরদারি ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।