প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান দাতুক সেরি মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই বাংলাদেশিরা কট্টর ইসলামপন্থি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে ও বিদেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারের চেষ্টায় যুক্ত ছিল।
মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক নিউ স্ট্রেইট টাইমস এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে জানায়, গত ২৪ এপ্রিল থেকে সেলাঙ্গর ও জোহর প্রদেশজুড়ে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা একটি ধারাবাহিক গোপন অভিযান পরিচালনা করে। তিন ধাপে পরিচালিত এই অভিযানেই ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইএস মতাদর্শে চরমপন্থা ছড়ানো, সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেওয়া, এবং বাংলাদেশে আইএস আদলে একটি নতুন সেল গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল এক বিবৃতিতে বলেন, আটককৃতদের মধ্যে ৫ জনকে শাহ আলম ও জোহর বারুর সেশন কোর্টে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ১৫ জনকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আর বাকি ১৬ জনকে তদন্তের স্বার্থে এখনো পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
বিশেষভাবে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, দেশটির স্পেশাল ব্রাঞ্চ গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, এই বাংলাদেশিরা শুধু চরমপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী নয়, তারা সংগঠিতভাবে মালয়েশিয়ায় বসেই বাংলাদেশে সরকারবিরোধী কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য সশস্ত্র নাশকতার পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিল। এমনকি নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে আইএস মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে তারা কাজ করছিল এবং স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করছিল সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য।
পুলিশ প্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, এই বাংলাদেশিরা সিকিউরিটি অফেন্সেস (স্পেশাল মেজারস) অ্যাক্ট ২০১২-এর আওতায় আটক হয়েছেন, যেটি মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ব্যবহৃত একটি কঠোর আইন। তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যারা এখনো হেফাজতে আছেন, তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।”
মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কাজ করছেন নির্মাণ, কৃষি ও পরিষেবা খাতে। এই ঘটনায় সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তা, ভাবমূর্তি এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং আটককৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও আইনি অবস্থান পর্যালোচনা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশিদের আটকের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ছে। এতে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে আইএস সংশ্লিষ্টতার এই অভিযোগ একটি গুরুতর নিরাপত্তাজনিত ও কূটনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়, দুই দেশ এই সংকট নিরসনে কতটা দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে সবচেয়ে জরুরি—এই ঘটনা যেন অন্য সব নিরীহ ও পরিশ্রমী বাংলাদেশি অভিবাসীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়ে সচেতনতা ও কূটনৈতিক সদিচ্ছা বজায় রাখা।