প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিনোদন জগতে একসময় ঝড় তোলা ‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার হঠাৎ মৃত্যু ভেঙে দিয়েছে অসংখ্য অনুরাগীর হৃদয়। মাত্র ৪২ বছর বয়সে চলে যাওয়া এই প্রাণচঞ্চল তারকা শুধু তার উজ্জ্বল উপস্থিতি দিয়েই নয়, মানবিক মূল্যবোধ আর সাহসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন। বিশেষ করে মা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তার সুস্পষ্ট অবস্থান ও সমাজমুখী চিন্তাধারা তাকে করে তুলেছিল অনন্য।
গত শুক্রবার হঠাৎ করেই মুম্বাইয়ের নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন শেফালি। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং বিনোদন অঙ্গনের কয়েকজন সহকর্মী। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা বলিউডে।
তবে এই তারকার জীবনের একটি বিশেষ দিক, যা হয়তো অনেকেই জানতেন না—তা হলো, শেফালির ‘মা’ হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন ছিল ভিন্নধর্মী। তিনি সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে নয়, বরং একজন অবলা শিশুকে দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে মাতৃত্বের পূর্ণতা খুঁজছিলেন। তার এই ভাবনার পেছনে গভীর অনুপ্রেরণা ছিল অভিনেত্রী সানি লিওনের পথচলা।
‘বিগ বস ১৩’ রিয়েলিটি শোতে অংশ নেওয়ার সময়ই তিনি প্রকাশ্যে বলেন, তিনি দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে মা হতে চান। ওই শোতেই সহপ্রতিযোগী হিন্দুস্তানি ভাউয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করেছিলেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে আরও খোলামেলাভাবে এই ইচ্ছার কথা জানান শেফালি। তিনি বলেছিলেন, সানি লিওনের দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাকে মুগ্ধ করেছিল। সেই সাহসিকতা ও হৃদয়ের প্রশস্ততা দেখে তার ভেতরে নিজেও এমন এক মাতৃত্বের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
শেফালি তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি সব সময়ই চাইতাম একটি কন্যাসন্তান দত্তক নিতে। এমন অনেক শিশু আছে, যারা একটি ভালো পরিবার ও নিরাপদ আশ্রয়ের অপেক্ষায় থাকে। আমি মনে করি, আমি সেই শিশুকে ভালোবাসা ও সুরক্ষা দিতে পারব। ঈশ্বর আমাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে কিছু ভাগ করে নেওয়াই আমার জন্য প্রকৃত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।”
এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি একা ছিলেন না। বিয়ের পর নিজের জীবনসঙ্গী পরাগ ত্যাগীকেও এই ইচ্ছার কথা জানান শেফালি। এবং পরাগ ছিলেন তার পরিপূর্ণ সমর্থক। একবার এক সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেছিলেন, “পরাগ আমাকে বলেছে— তুমি কীভাবে মা হতে চাও, সেটি সম্পূর্ণ তোমার সিদ্ধান্ত। সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে, না দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে—যেভাবেই হোক, আমি তোমার পাশে থাকব।” এই কথাগুলো শুধুমাত্র এক স্বামীর সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং একটি যুগলকে এক বিকল্প মাতৃত্বের পথে সাহস জোগানোর প্রমাণ।
শেফালির এই চিন্তা, তার সাহসিকতা, সমাজসচেতনতা এবং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল তার তারকা পরিচয়ের বাইরে। বিনোদন জগতে নিজের প্রতিভা দিয়ে যেমন আলো ছড়িয়েছেন, তেমনি নিজস্ব জীবনবোধে হয়ে উঠেছিলেন অসংখ্য নারীর অনুপ্রেরণা।
আজ তিনি নেই, কিন্তু তার এই অসমাপ্ত স্বপ্ন, তার মানবিক চিন্তা, তার অনন্য মাতৃত্ববোধ রয়ে যাবে জীবনের প্রেরণায়। এক সমাজে যেখানে দত্তক নেওয়াকে এখনো অনেক সময়ই গোপন রাখা হয় কিংবা সন্দেহের চোখে দেখা হয়, সেখানে শেফালির মতো একজন পরিচিত মুখ যখন এমন সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা নতুন আলো ছড়ায়।
তার অসমাপ্ত গল্প হয়তো থেমে গেল একটি হঠাৎ ঝড়ে, কিন্তু সে গল্পে ছিল সাহস, মমতা এবং মানবিক দায়বদ্ধতার অনন্য অধ্যায়। শেফালির এই পথচলা, এই স্বপ্ন—সবটাই আজ একটি অনুচ্চারিত প্রশ্ন রেখে যায় আমাদের কাছে: মা হওয়া কি কেবল রক্তের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ? না কি ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং মানসিক শক্তিতেও নিহিত থাকে মাতৃত্বের গভীরতা?
শেফালির জীবনের সেই অধ্যায় হয়তো পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু তিনি রেখে গেছেন এক সাহসী নজির—যা আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে, ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে।