প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব প্রতিবেদক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরে ‘সুপারস্টার’ কিংবা ‘কিং খান’ খেতাবের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ‘মেগাস্টার’ নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছেন শাকিব খান। ঢালিউডে তার দীর্ঘ ২৬ বছরের যাত্রায় উপহার দিয়েছেন বহু সুপারহিট সিনেমা, গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ভক্তবেস, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যার প্রভাব স্পষ্ট। তবে এই ‘মেগাস্টার’ ট্যাগ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দেশের আরেক বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। তাঁর মতে, একজন শিল্পীর পরিচয়ের আগে অতিরিক্ত বিশেষণ ব্যবহারে ঘটে পেশাগত ভারসাম্যহীনতা।
সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল শাকিব খান অভিনীত তাণ্ডব ও জাহিদ হাসান অভিনীত উৎসব চলচ্চিত্র দুটি। প্রাথমিকভাবে তাণ্ডব হলে বেশি চললেও, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয়তা এবং প্রদর্শন সংখ্যায় উৎসব এগিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে যখন জাহিদ হাসানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি জানান, শুধুমাত্র একজন অভিনেতার নামের আগে অতিরিক্ত বিশেষণ বা খেতাব ব্যবহার করা প্রথাগত ভ্রান্তি তৈরি করে।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে শাকিব খানের সিনেমাকে আলাদা করে দেখা হয়। শুধু অভিনেতা বলা হয় না, বলা হয় মেগাস্টার শাকিব খান। অথচ অন্য সবাইকে বলা হয় সাধারণ চিত্রনায়ক। এটা কেন হয়, বুঝি না। তিনি তো একজন অভিনেতা, তাঁর নামের আগে এমন একধরনের ‘ট্যাগ’ কেন দিতে হবে? জানি না এটা তার জন্য ভালো নাকি মন্দ, কিন্তু এই শব্দটা কানে লাগে।”
এই বক্তব্য শুধু এক ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং দেশের সামগ্রিক চলচ্চিত্র পরিবেশ ও সমতাভিত্তিক মূল্যায়ন কাঠামো নিয়েই তার প্রশ্ন। তার মতে, শিল্পের জগতে পরিচয়ের আগে অপ্রয়োজনীয় বিশেষণ বা শ্রেণিবিন্যাস শিল্পীদের মধ্যে অসাম্য ও অবিচার তৈরি করে। বর্ষীয়ান এই অভিনেতা আরও বলেন, “শেক্সপিয়ারের একটা কথা আছে, ‘কোনো কিছু হওয়া বড় কথা নয়, হয়ে থাকাটাই বড় কথা।’ আপনার কাজই আপনাকে প্রতিষ্ঠা দেবে, বিশেষণের প্রয়োজন নেই।”
বর্তমানে ঢালিউডে ঈদ কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করছে বড় তারকার উপস্থিতি, বিতরণ ক্ষমতা এবং হল সংখ্যার ওপর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, শুধু ‘নাম’ নয়, ভালো গল্প ও নির্মাণশৈলিই দর্শক টানছে বেশি। তাণ্ডব তারকাখচিত সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় সপ্তাহেই অনেক প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, “এতগুলো হল পেয়েও যদি ছবি টিকে না থাকে, তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়। অপমানজনকও বটে। যতটা বিনয়ী থাকা যায়, ততটাই ভালো। আত্মসম্মান রক্ষা হয়।”
তবে সমালোচনার মাঝেও শিল্পীর দায়বদ্ধতা এবং সমষ্টিগত উন্নয়নের বার্তা দিতে ভোলেননি তিনি। তার মতে, ঈদে মুক্তি পাওয়া কোনো সিনেমা ব্যক্তিগতভাবে কারও নয়, বরং তা পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনের। সব সিনেমা যেন ব্যবসায়িক সাফল্য পায়—এই প্রত্যাশাই তার। “আমার বিশ্বাস, সব সিনেমাই ভালো চলুক। এতে ইন্ডাস্ট্রিরই মঙ্গল,” বলেন জাহিদ হাসান।
এই মন্তব্য শুধু একটি নামকে ঘিরে বিতর্ক নয়, বরং দেশের চলচ্চিত্রে একটি সুস্থ, সম্মানজনক ও ভারসাম্যপূর্ণ পেশাগত পরিচয় ও পরিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশার ইঙ্গিত। চলচ্চিত্র জগতে এমন আলোচনা যত বাড়বে, ততই হয়তো গড়ে উঠবে সহনশীল, দায়িত্বশীল এবং গুণগত মূল্যায়নভিত্তিক একটি শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি।