সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

৫ আগস্টের গুলিবর্ষণ: ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ১ বার
৫ আগস্টের গুলিবর্ষণ: ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকা পরিণত হয়েছিল এক বিভীষিকাময় রণক্ষেত্রে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে রক্তাক্ত করতে সেদিন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে ঘটে যায় এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, সাঁজোয়া যান (এপিসি কার), হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং বিপুল পরিমাণ গুলি। গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ছয়জন তরুণ, আহত হন অসংখ্য নিরস্ত্র আন্দোলনকারী।

সেদিনের ভয়াল দৃশ্যের একটি অংশ আজো স্মৃতিতে গেঁথে আছে অনেকের—পুলিশের গুলিতে যখন একের পর এক তরুণ লুটিয়ে পড়ছিলেন, তখন দায়িত্বরত বাহিনীর সদস্যদের মুখে শোনা যাচ্ছিল উৎসবধর্মী উল্লাস: ‘গুলি লাগছে, লাগছে’, ‘শেষ’, ‘মরছে, মরছে!’ যেন তারা প্রতিপক্ষ কোনো শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, এক শত্রুতা-মুক্ত ‘ট্রেনিং গ্রাউন্ডে’ গুলি ছুঁড়ছেন!

পুলিশের এই অমানবিক হামলায় সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়া। তাদের রক্তে পিচঢালা রাস্তায় আঁকা হয়েছিল এক নির্মম অধ্যায়ের রেখা।

তদন্তে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। পুলিশের রমনা অঞ্চলের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার (ADC) শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলামের নির্দেশেই সেদিন আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ চালানো হয়। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত কনস্টেবল অজয় ঘোষ চাইনিজ রাইফেল হাতে থাকলেও অপ্রয়োজনে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আখতারুল ইসলাম তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং হুমকি দেন। এরপর তার রাইফেল কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজন হোসেনকে দিয়ে চালানো হয় একের পর এক গুলি।

ফরমাল চার্জশিট অনুযায়ী, পুলিশের ওই অভিযানে শুধু চাইনিজ রাইফেলই নয়, ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক গোলাবারুদ। অতিরিক্ত গোলা ও অস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশেই এই হত্যাযজ্ঞ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়।

এই মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন পলাতক—ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। অপর চার আসামি—সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলায় চারজন গ্রেপ্তার আসামির পক্ষে ‘ডিসচার্জ পিটিশন’ অর্থাৎ অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। শুনানির পরে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৪ জুলাই তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা। মামলাটির বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ।

আসামিপক্ষ দাবি করেছে, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা কেবল ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ পালন করেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা থাকলে পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় তা নিরসন হতো। অন্যদিকে প্রসিকিউশন বলছে, নির্দেশ বাস্তবায়নের নামে গণহত্যা চালিয়ে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়েছে, যা কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সুপরিকল্পিত ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ ছিল। প্রমাণ হিসেবে অভিযুক্তদের উপস্থিতি, প্রত্যক্ষ নির্দেশ এবং হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

তবে পলাতক থাকা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম চার্জশিটে এসেছে ‘পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা’ হিসেবে। রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ভূমিকা নিয়ে আলাদা তদন্ত চলছে।

এই মামলার প্রত্যাশিত রায় শুধু নিহতদের পরিবার নয়, সমগ্র জাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা হয়ে উঠবে—এই দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা সরকারি ক্ষমতা দিয়ে আর কখনো যেন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরানো না হয়। ৫ আগস্ট তাই শুধুই একটি দিন নয়, এটি হয়ে উঠেছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য এক দীর্ঘশ্বাসের নাম, এক শোকগাথার নাম—যার বিচার প্রতীক্ষায় আজও জাতি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া