প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে আদিব আদনান নামের ১২ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্র। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় মাতুয়াইল কেরানিপাড়া এলাকায় একটি ভবনের দশতলা ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে সে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিজেদের পোষা বিড়াল ধরতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আদিব পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পড়তো মাতুয়াইল শামসুল হক স্কুলে। গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার শেরপুর থানায় হলেও, আদিব পরিবারসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কেরানিপাড়া মোড়ে মিজানের বাড়িতে ভাড়া থাকত।
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, সন্ধ্যার দিকে আদিবের পোষা বিড়ালটি ভবনের ছাদে উঠে যায়। পোষা প্রাণীর প্রতি আদিবের মমতা ছিল প্রবল। সে বিড়ালটি ধরতে একাই ছাদে চলে যায়। ছাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিড়ালটির নাগাল পাওয়ার চেষ্টাকালে হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যায় আদিব। মূহূর্তেই তার নিথর দেহ পড়ে থাকে ভবনের নিচে।
মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ছুটে আসেন আদিবের বড় ভাই রেদোয়ান। তিনিই প্রথমে ছোট ভাইকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। ঢামেকে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন, শিশুটির মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানায় জানানো হয়েছে।
আদিবের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একজন প্রাণবন্ত, প্রাণচঞ্চল বালক—যে সকালে স্কুলে গিয়েছিল, সন্ধ্যায় হয়ে গেল নিথর নিঃশব্দ এক নাম। শিশুটির স্কুল, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকরা কেউই মেনে নিতে পারছেন না এই অকালে চলে যাওয়া প্রাণটির বিদায়।
শিশুটির মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং নাগরিক জীবনে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপত্তা ও সচেতনতার বিষয়েও গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। বিশেষ করে ভবনের ছাদগুলো কতটা নিরাপদ, ছাদে প্রবেশ কতটা উন্মুক্ত ও শিশুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে যাওয়া কত সহজ—এই প্রশ্নগুলো নতুন করে উঠে এসেছে।
পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা একজন শিশুর জীবন কেড়ে নেবে—এটা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আদিবের নিথর দেহ রেখে গেছে এক অনির্বচনীয় শোক এবং সতর্কতার একটি নিরব বার্তা। নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা কাঠামো এবং অভিভাবকত্বের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে আজকের এই মৃত্যু আমাদের বাধ্য করে।
এই দুর্ঘটনা হয়তো আরেকটি নামমাত্র খবর হয়ে থাকবে না—বরং সচেতনতা বাড়ানোর, ভবনের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং শিশুদের জীবন নিয়ে আরও যত্নবান হওয়ার এক করুণ অনুরণন হয়ে থাকবে সবার মনে।