প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
গাজার রক্তঝরা আকাশের নিচে আরেকটি প্রাণ ঝরে পড়ল। ফুটবল মাঠের প্রতিভাবান খেলোয়াড় মোহান্নাদ আল লেলে আর ফিরে যাবেন না মাঠে, ফিরে যাবেন না বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে স্বজনদের কাছে। মধ্য গাজার মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই তরুণ ফিলিস্তিনি ফুটবলার। তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
জানা যায়, গত সোমবার, ৩০ জুন, মোহান্নাদ আল লেলের বাড়িতে চালানো হয় সরাসরি ড্রোন হামলা। ক্ষেপণাস্ত্রটি তার মাথায় গুরুতরভাবে আঘাত হানে, ফলে মস্তিষ্কে তীব্র রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে দীর্ঘ কয়েকদিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। নতুন জীবন শুরুর পর্বে ছিলেন তিনি, সদ্য বিবাহিত হয়েছিলেন, স্বপ্ন ছিল মাঠে ফিরে দেশের হয়ে আরও অনেক কিছু করার। সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল।
তার মৃত্যুতে শোকাহত সতীর্থরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলেই মেলে বন্ধুদের কান্নাভেজা পোস্ট। মোহাম্মদ আল শরীফ নামের এক সতীর্থ লিখেছেন, “প্রতিদিন আমরা কাউকে না কাউকে হারাচ্ছি। আমি নিজেও হতে পারি পরবর্তী জন। আল লেলে আজ আর নেই। ইসরায়েলি বোমায় মাঘাজিতে নিজের ঘরেই প্রাণ হারিয়েছে।”
ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন ক্রীড়াবিদ। এর মধ্যে ফুটবলারই আছেন ২৬৫ জন। প্রতিদিনের মতো নতুন করে কোনো না কোনো অ্যাথলেট হারিয়ে যাচ্ছেন ইতিহাসের গর্ভে, যাদের জীবনের সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিভা, সম্ভাবনা এবং একটি জাতির গৌরবময় ভবিষ্যতের অংশ।
মোহান্নাদ আল লেলের মৃত্যু এমন এক সময়ে এলো, যখন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনও আর এই নৃশংস বাস্তবতা থেকে নিরাপদ নয়। বৃহস্পতিবারই বিশ্ব খেলাধুলা আরও দুটি হৃদয়বিদারক খবর পেয়েছে—একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের পর্তুগিজ তারকা দিয়েগো জোতা এবং ইউরোপিয়ান স্টক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন মাত্র ২০ বছর বয়সী স্প্যানিশ মোটোজিপি রাইডার বোরজা গোমেজ।
তবে এই মৃত্যুগুলো ছিল দুর্ঘটনা; আর মোহান্নাদ আল লেলের মৃত্যু ছিল পরিকল্পিত আগ্রাসনের ফল। গাজার শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে ক্রীড়াবিদ—কেউই আজ নিরাপদ নন। আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠনগুলো বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনকার ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নতুন করে জীবন ঝরে পড়ছে।
মোহান্নাদ আল লেলের চলে যাওয়ায় বিশ্ব ক্রীড়াবিশ্ব এক প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়কে হারাল, আর ফিলিস্তিন হারাল তার একজন সাহসী স্বপ্নবাজ তরুণকে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফুটবল মাঠের বাইরে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে থাকা জাতিগুলোর কষ্টার্জিত স্বপ্নগুলো আবারও থমকে দাঁড়াল। গাজা উপত্যকায় আজ শুধুই কান্না আর একরাশ দীর্ঘশ্বাস—যেখানে মাঠ, বল আর জার্সির বদলে গুনছে শুধু গুলির আওয়াজ।