সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

আজকের দিনটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি কালো অধ্যায়

একটি বাংলাদেশ অনলাইন
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার
আজ সংবাদপত্রের কালো দিবস

প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

আজ ১৬ জুন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে একটি বেদনার্ত ও কলঙ্কিত দিন—সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঘোষিত বাকশাল শাসনের অংশ হিসেবে একটি চরম ও ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকার ঘোষিত এক বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের সব স্বাধীন ও বেসরকারি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে মাত্র চারটি সরকারি নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা চালু রাখা হয়। এসব পত্রিকা ছিল কেবল সরকারের প্রচারপত্র হিসেবে ব্যবহৃত। এর ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েন এবং অসহনীয় মানবেতর জীবনের মুখোমুখি হন।

সংবাদপত্র বন্ধ করার এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সরাসরি আঘাত। একদিকে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ, অন্যদিকে গোষ্ঠীগত ও ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারে রুদ্ধ হয়ে যায়। দেশের গণমাধ্যম কার্যত সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, যা ছিল একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত। সংবিধানে আনা চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে এ একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর সাংবাদিক সমাজ এই দিনটিকে গভীর ঘৃণা ও ধিক্কারসহকারে সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এই দিবসটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, সমগ্র জাতির বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলার স্মারক হিসেবে গণ্য হয়। আজও এই দিনটির স্মরণে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও আলোচনায় অংশ নেবেন।

এত বড় একটি গণতান্ত্রিক বিপর্যয়ের অবসান আসে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে, যখন সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাকশালের একদলীয় ও দমনমূলক ধারা বাতিল করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরায় নিশ্চিত হয় এবং গণমাধ্যমে নতুন প্রাণ ফিরে আসে।

কিন্তু এরপরের সময়কালেও সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের কালো ছায়া একেবারে দূর হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সরকার সমালোচনামূলক এবং ভিন্নমত প্রকাশকারী সংবাদমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন চালাতে শুরু করে। দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বহু টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অসংখ্য সাংবাদিক চাকরি হারিয়ে দুঃসহ জীবনে নিপতিত হন। এই সময়কালেই পেশাদার সাংবাদিকতা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়ে। সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে। সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ড সেই দুঃসহ স্মৃতির একটি বড় উদাহরণ।

এ সময় সরকার বিভিন্ন কালাকানুন, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, যা ব্যবহার করে সংবাদকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হয়। সরকারের কঠোর নজরদারি, হুমকি এবং দমননীতি অনেক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে বাধ্য করে নীরবতা পালনে কিংবা সরকারি প্রচারণার যন্ত্রে পরিণত হতে। দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতা জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে, এবং জনগণের আস্থা গণমাধ্যমের ওপর থেকে কমে যায়।

২০২4 সালের মাঝামাঝিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কিছুটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেকটা মুক্ত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পায় সাংবাদিক সমাজ। তবে এখনো বেশ কিছু গণমাধ্যমে পূর্ববর্তী সরকারের দোসররা রয়ে গেছে, যারা সরকারের প্রতি তোষামোদ করে ভুল তথ্য পরিবেশন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। ডিজিটাল মাধ্যমে ভিউ বাড়ানোর নামে তথ্যের বিকৃতি ও গুজব ছড়ানোও একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হলেও তা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়। সাংবাদিকদের জীবন ও পেশা এখনো অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পথে বাধা এখনো অনেক। তাই সংবাদপত্রের কালো দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—গণতন্ত্রের প্রহরী হিসেবে স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব কত গভীর, আর সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে অবিরাম লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।

আজকের এই দিন শুধু অতীতের দুঃসহ স্মৃতিচারণের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে আর কখনো যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ না হয়, সেই প্রতিজ্ঞা গ্রহণের দিনও বটে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া