প্রকাশ: ২০শে জুন, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিশ্বব্যাপী উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, যুদ্ধঘন পরিবেশ, ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণি এবং আঞ্চলিক সংঘাত—সব মিলিয়ে সময় যেন এক অস্থির, অচেনা গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা, লেবাননের প্রতিরোধ, ইয়েমেনের সহিংসতা এবং অন্যান্য আরব ও অ-আরব রাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি সব মিলিয়ে অনেকেই ধারণা করছেন, বর্তমান সংঘাত হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত যুদ্ধগুলোর একটি।
সময়ের গভীরতায় অনেকেই এই যুদ্ধকে ধর্মীয় পটভূমিতে বিচার করে বলছেন, এটি হতে পারে পৃথিবীর “শেষ যুদ্ধ”—যা কেবল ভূ-রাজনৈতিক নয়, বরং এটি মানব সভ্যতার চিরন্তন দ্বন্দ্বের শেষ রূপ। অনেকে এটিকে ‘মালহামা’ বা ‘আল-মালহামা আল-কুবরা’ অর্থাৎ “বৃহৎ যুদ্ধ” বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। ইসলামি হাদিস, খ্রিস্টান বাইবেল, এমনকি ইহুদি ধর্মশাস্ত্রেও ‘শেষ সময়ের যুদ্ধ’ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণি আছে—যার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির অনেক কিছুই অভাবনীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে।
বিশেষ করে মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে কথিত এই ‘শেষ যুদ্ধ’ অবধারিতভাবে ইজরায়েলের ‘বাবে লুদ’ নামক এলাকায় গিয়ে শেষ হবে বলে বলা হয়। হাদিসে বর্ণিত আছে, এই স্থানেই দাজ্জালকে হত্যা করা হবে, এবং তার মধ্য দিয়েই শেষ হবে পৃথিবীর যুদ্ধ-সংঘাতের ইতিহাস। দাজ্জালের পতনের পরই শুরু হবে শান্তির এক নতুন অধ্যায়—এমনটাই বিশ্বাস করে থাকেন বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
এ যুদ্ধের পরিণতিকে ঘিরে আরও একটি ধারণা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তা হলো ৮০টি কুফফার জোট বা শক্তিধর গোষ্ঠী বিলাদুশ শামে (বর্তমান সিরিয়া ও তার আশপাশের অঞ্চল) এসে ইজরায়েলকে রক্ষা করার চেষ্টায় নামবে। কিন্তু ধর্মীয় পাণ্ডুলিপিতে বলা হয়েছে—এই সব কুফরি জোট শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ হবে, সেটি শুধুমাত্র ভূখণ্ড বা আধিপত্যের জন্য নয়—বরং হবে ন্যায়, সত্য এবং ঈমানের পক্ষে।
এই যুদ্ধকে কেউ কেউ দেখছেন আধুনিকতার শেষ ধাপ হিসেবে। পশ্চিমা সভ্যতা, ভোগবাদী চিন্তাধারা, ও আধিপত্যবাদী শক্তির পতনের প্রতীক হিসেবেও অনেকে একে দেখছেন। দীর্ঘদিনের একনায়কতান্ত্রিক, সাম্রাজ্যবাদী দখলদারিত্ব এবং ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে এটি হতে যাচ্ছে এক অনন্য প্রতিরোধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা এখন এমন এক সময় অতিক্রম করছি, যেখানে ধর্মীয় ভাষ্য, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সামরিক কৌশল এক জায়গায় মিলিত হয়ে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সংঘাত কেবল একটি ভূখণ্ডের দখল বা একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ নয়—বরং এটি হতে যাচ্ছে সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ, যেখানে পর্দা উঠবে এক নতুন যুগের।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, সময় এসেছে শেষ জামানা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের। বিভ্রান্তি, ফিতনা এবং দুনিয়াবি ধোঁকায় হারিয়ে যাওয়ার আগেই দরকার আত্ম-উপলব্ধি, ইমানি চেতনার জাগরণ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণে একটি পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গি।
পৃথিবী হয়তো এখন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চূড়ান্ত অধ্যায়ের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে। কেউ জানে না কী হতে যাচ্ছে আগামী দিনে। তবে একথা নিশ্চিত—এই যুদ্ধ ইতিহাসের চেনা ছকে বাঁধা কোনো যুদ্ধ নয়। এটি মানবতার অস্তিত্ব, ন্যায়ের স্বপক্ষে, এবং তাগুতের বিরুদ্ধে এক অনন্য প্রতিরোধ।
সময়ই বলবে—এই যুদ্ধ সত্যিই শেষ যুদ্ধ কিনা। তবে প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।
শুধু রাজনৈতিক, কূটনৈতিক কিংবা সামরিক প্রস্তুতি নয়—প্রয়োজন মানসিক, আত্মিক ও বিশ্বাসের প্রস্তুতি।
কারণ ইতিহাসের এই অধ্যায়ে কেবল শক্তি নয়, ঈমানই হবে বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।