প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইসলামি বিশ্বে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক রচিত হলো পবিত্র মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ বা মসজিদুল হারামে। শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫—এই দিনটি ইতিহাসে স্থান করে নিল সেই অভূতপূর্ব ঘটনার জন্য, যেদিন প্রথমবারের মতো বাংলাসহ বিশ্বের ৩৫টি ভাষায় সরাসরি অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হলো পবিত্র জুমার খুতবা।
পবিত্র দুই মসজিদের (হারামাইন শরিফাইন) দেখভালের দায়িত্বে থাকা সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক প্রেসিডেন্সি এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করে। খুতবা প্রদান ও জুমার নামাজের ইমামতি করেন ইসলামি বিশ্বের অন্যতম প্রধান আলেম ও প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিশ্ব মুসলিম সমাজের ঐক্য, শান্তি এবং ইসলামের মূল্যবোধকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ উদ্যোগের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে প্রেসিডেন্সির জনসংযোগ বিভাগের সাধারণ তত্ত্বাবধায়ক ফাহিম আল-হামিদ বলেন, “বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলমান যেন খুতবার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা তাদের নিজস্ব ভাষায় সরাসরি বুঝতে পারে—সেই উদ্দেশ্য থেকেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ধর্মীয় সম্প্রচারে এই প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সংযোগের পথ প্রশস্ত করা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য, বোঝাপড়া এবং সভ্যতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে এক নতুন সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে।”
বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য খুতবা শুধু ধর্মীয় ভাষণ নয়, বরং এটি একটি দিকনির্দেশনা, একটি আত্মশুদ্ধির মাধ্যম এবং এক ধরনের সময়োপযোগী বার্তা। এতদিন ধরে মক্কার খুতবা কেবল আরবি ভাষায় প্রদান করা হতো, ফলে অনেকে তার পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করতে পারতেন না। তবে এখন, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসে বাংলাভাষীসহ বহুভাষী মুসলমানরা সরাসরি ও নিজেদের মাতৃভাষায় শুনতে পারবেন এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
এ উদ্যোগ শুধু যে ভাষাগত অন্তরায় ভেঙে দিয়েছে তা-ই নয়, বরং ইসলামি সম্প্রচারের ইতিহাসে এটি এক মাইলফলক। ধর্মীয় অন্তর্দৃষ্টি এবং বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এটি অগণিত মুসলমানের জন্য নতুন এক দ্বার উন্মোচন করেছে। প্রতিটি ভাষার মাধ্যমে খুতবার যথাযথ ভাবার্থ উপস্থাপন করায় বয়ানের গ্রহণযোগ্যতাও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব মুসলিম সমাজে এ উদ্যোগে ব্যাপক প্রশংসার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে বসবাসরত মুসলমানরা এই নবতর প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইসলামি ঐক্যের ক্ষেত্রে এটি যে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, তা বিভিন্ন ইসলামি স্কলার, ধর্মীয় নেতা ও সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
সৌদি আরব সরকার এই প্রক্রিয়াকে ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। ধর্মীয় সম্প্রচারের গণ্ডি পেরিয়ে, ভবিষ্যতে এটি ইসলামি শিক্ষা, হজ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক বার্তাগুলোতেও বহুভাষায় পৌঁছে দেওয়ার একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।
অতএব, ২০২৫ সালের ৪ জুলাই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধু একটি তারিখ নয়—এটি একটি ঐতিহাসিক রূপান্তরের দিন। বাংলাসহ ৩৫টি ভাষায় মক্কার জুমার খুতবার অনুবাদ বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামের শান্তির বার্তাকে পৌঁছে দিতে যে সক্ষম হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক বিজয়ের নামান্তর।