প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
রাশিয়ার কারাগার থেকে বিশ্ব নেতাদের প্রতি একটি অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন দেশটির ১১ জন কারাবন্দি রাজনৈতিক কর্মী। খোলা চিঠিটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেখানে বন্দিরা রাশিয়ার ভেতরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমন, দমনমূলক আইন এবং ন্যায়ের অভাবে নিজেদের বন্দিত্ব ও দেশের পরিস্থিতির ভয়াবহ রূপরেখা তুলে ধরেন।
চিঠিতে লেখা রয়েছে, “আমরা, রাশিয়ান রাজনৈতিক বন্দিরা, সমস্ত আন্তর্জাতিক নেতাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যারা মানুষের বিশ্বাস, মূল্যবোধ বা মতপ্রকাশের জন্য নিপীড়নের শিকার—তাদের প্রতি গুরুত্ব দিন।” তারা জানান, রাশিয়ায় বর্তমানে কমপক্ষে ১০ হাজার রাজনৈতিক বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইউক্রেনীয় বেসামরিক জিম্মিরাও। এদের সবাইকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে একটিমাত্র কারণে—জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ‘অপরাধে’।
চিঠির ভাষায় উঠে এসেছে শাসনব্যবস্থার গভীর নির্যাতনমূলক রূপ: “আজকের রাশিয়ায় ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা বলতে কিছু নেই। কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার সাহস দেখায়, তাহলে তাকে কারাগারে যেতে হয়। মতপ্রকাশ এখন অপরাধে পরিণত হয়েছে।”
চিঠিতে রাজনৈতিক নিপীড়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং তার ভয়াবহ মাত্রাও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, “২০১২ সাল থেকে রাশিয়ায় একের পর এক দমনমূলক আইন চালু করা হয়েছে, যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য ভিন্নমত দমন করা। শুধু ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যেই অন্তত ৫০টি কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে, ইউক্রেন আক্রমণের পর আরও ৬০টিরও বেশি নতুন আইন পাস হয়।”
এই আইনের ছায়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। চিঠিতে বলা হয়, “রাশিয়ায় আজ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বন্দিরা অন্য সাধারণ বন্দিদের তুলনায় আরও কঠিন পরিস্থিতিতে দিন কাটান। তাদের চিকিৎসা ও আইনি সুরক্ষা নেই। নির্যাতন হলেও সেগুলোর তদন্ত হয় না, বিচার তো দূরের কথা।”
তবে এত কিছু সহ্য করেও, এসব মানুষ হারিয়ে ফেলেননি তাদের কণ্ঠস্বর বা বিশ্বাস। বরং চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের নাগরিক অবস্থান ধরে রেখেছি, আমরা চুপ থাকিনি।”
চিঠির মাধ্যমে একটি স্পষ্ট দাবি জানানো হয়—যুদ্ধবন্দি ও বেসামরিক বন্দিদের অবিলম্বে বিনিময়ের ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যার মধ্যে ইউক্রেনীয় জিম্মিরাও রয়েছেন। বিশেষভাবে বলা হয়, রাশিয়ার কারাগারে থাকা অসুস্থ রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সবশেষে চিঠিতে বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রতি একটি জোরালো আহ্বান জানানো হয়: “আপনারা যেন আর চুপ থাকেন না। দয়া করে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে থাকা রাশিয়ানদের পদক্ষেপ ও আত্মত্যাগের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরুন। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য বলছে, তাদের কণ্ঠস্বর যেন হারিয়ে না যায়।”
এই চিঠি নিছকই কিছু কারাবন্দির আর্তনাদ নয়, বরং এটি আজকের রাশিয়ার বাস্তবতা ও একটি জাতির বিবেকের প্রতিধ্বনি। বিশ্ব নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এটি যেন এক স্পষ্ট আহ্বান—আলোকের পথে দাঁড়াতে হবে, নীরবতা ভাঙতে হবে।