সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

জাল সনদ, ক্ষমতার দাপট ও কোটি টাকার সম্পদের গল্প: সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুন্ডুকে ঘিরে রহস্য ও প্রতারণার বিস্ময়কর অধ্যায়

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
  • ৪০ বার

প্রকাশ: ২৪শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমন একটি ছবি, যেখানে সেনাবাহিনীর একটি আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বসে আছেন এক বিতর্কিত ব্যক্তি—তার পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রশ্ন এবং জনমনে উদ্বেগ। অনেকেই বলছেন, সেনাবাহিনীর মতো শৃঙ্খলাপূর্ণ বাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ে এভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে পাশে বসানো সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে এই ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া এবং ব্যাখ্যা দেওয়া সেনাবাহিনীর দায়িত্ব বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গোল চিহ্নিত ওই ব্যক্তির নাম রামজীবন কুন্ডু। তার পরিচয় খতিয়ে দেখে চমকে উঠেছেন অনুসন্ধানকারীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, রামজীবন কুন্ডু একজন সাবেক সাবরেজিস্ট্রার, যার বিরুদ্ধে রয়েছে জালিয়াতি, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের এক দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস।

তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ সেনের ভাগ্নে জামাতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সরকারি চাকরিতে থাকাকালীনই তিনি রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা হন এবং সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে নিজের দখলদারিত্ব ও প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। আওয়ামী লীগের বড় বড় অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থেকে নিজেকে দলের ঘনিষ্ঠ বলেও তুলে ধরতেন।

রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে, এবং তার আগে নীলফামারী জেলায় থাকাকালীন, তার বিরুদ্ধে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জাল দলিল কারসাজির অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তিনি নিয়মিত নিয়োগ বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এক পর্যায়ে রংপুর সদর থেকে “শাস্তিমূলক বদলি” হিসেবে তাকে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু অদৃশ্য রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাবে তিনি কয়েক মাসের মধ্যে আবার রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় নিজের পছন্দমতো পোস্টিং করিয়ে নেন।

তবে সবচেয়ে আলোচিত ও বিস্ময়কর তথ্য হলো—রামজীবন কুন্ডুর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সনদের জালিয়াতি। তিনি মাত্র ৬ বছর বয়সে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ অর্জন করেন, যা বাস্তবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার জন্মসনদ অনুযায়ী, তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন মাত্র ৫-৬ বছরের শিশু।

এই সনদ কাজে লাগিয়ে তিনি সাবরেজিস্ট্রারের পদে নিয়োগ পান। শুধু তিনিই নন, এই কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত আরও ৩৯ জন বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন যাদের জন্ম তারিখ মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩-৬ বছরের মধ্যে ছিল।

এমনকি জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার থাকার সুবাদে রামজীবন কুন্ডু অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, রংপুর নগরীর আরএমসি মার্কেট এলাকার সামনে তিনি কিনেছেন একটি ৮ তলা ফ্ল্যাট, যার মূল্য এক কোটি টাকার বেশি। রাজারহাটে নিজ গ্রামে এবং ঢাকায় তার একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ধাপ চেকপোস্ট সড়কে রয়েছে আরও সম্পত্তি। নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এই ঘুষ বাণিজ্য তার নিজের অফিসের মাধ্যমে চলত। একজন বেসরকারি কর্মচারী রনিকে অফিসে বসিয়ে ঘুষের হিসাব রাখা এবং টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। সেই রনিও এখন একজন বিত্তশালী হয়ে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করছেন, যার পেছনে আর্থিক যোগান এসেছে সেই ঘুষের টাকাই।

রামজীবনের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হলেও তার অবস্থান ও ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকে। কলকাতার কিছু এমএলএদের সঙ্গে তার ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ এবং ভারতের দুটি বাড়ি থাকার বিষয়টিও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তিনি নিজেকে গোপন সংস্থা “র”-এর ঘনিষ্ঠ লোক বলে দাবি করে থাকেন বলে জানা গেছে।

এই তথ্যগুলো শুধু ব্যক্তি রামজীবন কুন্ডুর নয়, বরং একটি বৃহৎ দুর্নীতির চক্র এবং নিয়োগ জালিয়াতির সংকটকেই সামনে নিয়ে আসে। তিনি কিভাবে বিভিন্ন প্রশাসনিক সীমা ভেঙে এতোদূর পৌঁছেছেন—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধান, দলিলপত্র এবং প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এটি এখন একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—প্রশাসন, নীতি নির্ধারক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কতটা দায়িত্বশীলভাবে এমন গুরুতর প্রতারণা প্রতিহত করতে সক্ষম হচ্ছে?

সেনাবাহিনীর মত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির উপস্থিতি তাদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে—এমন মন্তব্যও করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দ্রুত এবং স্বচ্ছ ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়, জালিয়াতি, রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একত্রিত হলে প্রশাসনের ভেতরে কেমন ভয়াবহ অবক্ষয় তৈরি হতে পারে—রামজীবন কুন্ডু তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এখন সময় হয়েছে এমন ‘রূপকথার দুর্নীতি’ চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার। জনস্বার্থে, দেশপ্রেমে এবং সুশাসনের স্বার্থেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া