সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

ক্ষমা ও গণতন্ত্র: জামায়াত আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের শর্তসাপেক্ষ ভাবনা

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • ৩৩ বার

প্রকাশ: ২৬শে জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

গতকাল রাতে জনপ্রিয় টক শো ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’-এ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের দেওয়া সাক্ষাৎকারটি জাতীয় রাজনীতিতে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাৎকারে তিনি জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতন্ত্র, সংবিধান এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর কিছু মতামত প্রকাশ করেন যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার ঝড় তুলেছে।

ডা. শফিকুর রহমান তার আলোচনা শুরু করেন একটি অভূতপূর্ব ঘোষণা দিয়ে। গভীর আবেগের সাথে তিনি বলেন, “আজ আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের ঘটনাবলি নয়, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো কর্মকাণ্ডে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা বেদনা পেয়েছেন, আমি তাদের সবার কাছে সশ্রদ্ধভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

এই ক্ষমা প্রার্থনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন: ১. এটি জামায়াতের জন্য একটি ঐতিহাসিক অবস্থান পরিবর্তন, ২. দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় একটি সাহসী পদক্ষেপ, ৩. ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বিশেষ

তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে যোগ করেন, “এই ক্ষমা প্রার্থনা যেন কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে। বারবার ক্ষমা চাওয়ার নামে যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চর্চা করবে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।”

ডা. শফিকুর রহমান গণতন্ত্র সম্পর্কে একটি অভিনব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তার মতে, “গণতন্ত্র কোনো চূড়ান্ত মতবাদ বা আদর্শ নয়, বরং এটি একটি পদ্ধতি মাত্র। যেমন গাড়ি একটি যানবাহন – আপনি তাতে করে ভালো জায়গায় যেতে পারেন, আবার খারাপ জায়গায়ও যেতে পারেন। গণতন্ত্রও তেমনি একটি ব্যবস্থা।”

তিনি তার বক্তব্যে আরও যোগ করেন, “যদি এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করতে পারি, যদি জনগণের কল্যাণে এটি কাজে লাগে, তাহলে ইসলামে এর কোনো বাধা নেই। বরং এটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”

এই অংশে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন, “আমার এই ব্যাখ্যা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে আমি সেটা মেনে নেব। গণতন্ত্রের মূল চেতনা হলো ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা। আমি সেই চেতনাকেই সম্মান করি।”

সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে জটিল অংশ ছিল সংবিধান ও ইসলামী আইনের মধ্যে সমন্বয় সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা। তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান সংবিধানের অনেক ধারা ইসলামী নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। যেমন – ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সম্পদের সুষম বণ্টন ইত্যাদি। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট ব্যবধান আছে।”

তিনি এই ব্যবধান দূর করার জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেন:
১. প্রথমে একটি জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য গঠন, ২. তারপর আইনি সংস্কারের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা, ৩. সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে সাংবিধানিক বৈধতা নিশ্চিত করা

তিনি স্পষ্ট বলেন, “ইসলামী আইন কখনোই জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। এটি একটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার প্রক্রিয়া। জনগণের সমর্থন ও বোঝাপড়া ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”

তিনি মাদক নিষিদ্ধকরণের উদাহরণ টেনে বলেন, “যখন প্রথম মাদক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন অনেকেই এটাকে অসম্ভব ভেবেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে, আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়েছে, সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। আজ এটি একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। ইসলামী নীতিও এমনিভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “এটি জামায়াতের জন্য একটি বড় মাত্রার কৌশলগত পরিবর্তন। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে আগের পথে আর চলা সম্ভব নয়।”

অপর বিশ্লেষক প্রফেসর নাসরিন আহমেদ মনে করেন, “এই বক্তব্যে দুটি স্পষ্ট লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে – একদিকে অতীতের বোঝা থেকে মুক্তি, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি।”

ডা. শফিকুর রহমানের এই বক্তব্যের পর কয়েকটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে: ১. জামায়াত কি সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত? ২. সংবিধান ও শরিয়াহর মধ্যে সমন্বয় কীভাবে সম্ভব? ৩. এই নতুন অবস্থান কি জামায়াতকে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে পারবে? ৪. অন্যান্য ইসলামী দলগুলো এই পদক্ষেপকে কীভাবে নেবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। #জামায়াত_ক্ষমা_প্রার্থনা ট্যাগটি টুইটারে ট্রেন্ড করছে। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এতদিন পর জামায়াত বুঝতে পারল ইতিহাসের ভুল?” অন্যদিকে অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এই বক্তব্যকে “দেরিতে হলেও স্বাগত জানানোর মতো” বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে কিছু বিরোধী দল এটিকে “রাজনৈতিক কৌশল” বলে অভিহিত করেছেন।

ডা. শফিকুর রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এটি শুধু জামায়াতের ভবিষ্যৎ গতিপথই নির্ধারণ করবে না, বরং সমগ্র দেশের ধর্ম-রাজনীতির সমীকরণেও পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবসম্মত এবং স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে দলের অভ্যন্তরীণ সদিচ্ছা এবং জাতীয় পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতার উপর। আগামী দিনগুলোতে এই বক্তব্যের প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া