প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান দুরবস্থা, তারল্য সংকট এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতার প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যাংকিং খাতে এক দুঃশ্চিন্তাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংক লেনদেন কমে গেছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতার একটি বড় ইঙ্গিত বহন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা নেমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৫ কোটি টাকায়। এতে স্পষ্ট যে, এক মাসের ব্যবধানে লেনদেনের পরিমাণে নাটকীয় পতন ঘটেছে। তবে তুলনামূলকভাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন বেড়েছে ৪৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা এবং নীতিনির্ধারণে দীর্ঘসূত্রতা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ঋণগ্রহণ ও বিতরণ প্রক্রিয়ায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, দেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক বর্তমানে তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। অতীতে সংঘটিত ব্যাংক খাতের লুটপাট, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ এবং নীতিগত দুর্বলতার কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি এখন অত্যন্ত দুর্বল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে ১১টি ব্যাংক যেগুলো অতীতে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির মুখে পড়েছিল, তারা এখন নিয়মিত অর্থ লেনদেন বা চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকসেবা দিতে পারছে না। এসব ব্যাংক এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকেও ধার নিয়ে সেই অর্থ যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের বক্তব্য, আন্তঃব্যাংকে লেনদেন বৃদ্ধি সাধারণত একটি অর্থনৈতিক গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। এটি বোঝায় যে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে কার্যক্রম জোরালো এবং দেশের অর্থনীতিতে পুঁজির প্রবাহ সক্রিয়। কিন্তু যখন লেনদেন হ্রাস পায়, তখন তা অর্থনীতির গতি থমকে যাওয়ার বার্তা বহন করে। চলমান পরিস্থিতি এই দিকেই ইঙ্গিত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঐ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০ কোটি টাকায়, অর্থাৎ বৃদ্ধি ঘটে ৭৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা আরও বাড়ে ৩১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকার পরিমাণে। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেখা যায় বড় ধরনের পতন, যেখানে জানুয়ারির তুলনায় কমেছে লাখ কোটি টাকারও বেশি।