প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাক্তন প্রশাসক কেএম নূরুল হুদা এখন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হিসেবে ফের চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো রিমান্ডে নেয়া হলো সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে।
বিচারিক আদালতে হাজিরের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মামলায় নূরুল হুদার সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট এবং তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের জন্য আরও রিমান্ড প্রয়োজন। আদালতে এদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তাকে আদালতে আনা হয় দুপুর আড়াইটার পর।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই মামলার সূত্রপাত গত রোববার সন্ধ্যায়, যখন একটি ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ (মব) পরিস্থিতির মধ্যে নূরুল হুদাকে হেনস্তা করা হয় এবং পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর জানা যায়, তিনি বিএনপির দায়ের করা একটি মামলার অন্যতম প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মামলাটি করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। অভিযোগে বলা হয়, প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ মামলায় নাম উল্লেখ করে ২৪ জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট সময়ের তিনজন সিইসি—কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মামলায় শুধু নূরুল হুদাই নয়, গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় সদ্য সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও। বৃহস্পতিবার তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
উল্লেখযোগ্য যে, এই মামলায় গত সোমবারই নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শুনানি হয় এবং আদালত সেদিন চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে এবার নতুন করে আরও চার দিনের রিমান্ড আদেশ এল।
একাধিক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একই মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং গভীরভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু রাজনীতিক নয়, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে।
এখন নজর থাকবে এই মামলার তদন্ত কতদূর গড়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে কী ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিসরে এটি এক নতুন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে।