সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে যুগান্তকারী পরিবর্তন: বাধ্যতামূলক হলো আপোষ বণ্টননামা দলিল

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
  • ৩৪ বার

প্রকাশ: ৩রা জুন, ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ও সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান পারিবারিক বিরোধ, জটিলতা এবং মামলার পাহাড় এবার হয়তো কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। কারণ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন একটি নিয়ম কার্যকর করেছে, যার মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতিতে আনোয়ার পরিবর্তন এসেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে ‘আপোষ বণ্টননামা দলিল’ ছাড়া সম্পত্তির নামজারি, হস্তান্তর বা বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নিয়ম ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুস্পষ্ট বিধান রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন নতুন এই নিয়মের মূল ভিত্তি হলো “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩”, যার অধীনে এখন থেকে পরিবারভিত্তিক বণ্টনপ্রক্রিয়াকে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ, ভাই-বোনদের মধ্যে বিভক্তি, দীর্ঘদিন ধরে চলা দেওয়ানি মামলার পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায়।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০০৪ সালেই একটি আদেশে আপোষ বণ্টননামা দলিলকে উৎসাহিত করা হয়েছিল, কিন্তু এর বাস্তব প্রভাব ছিল সীমিত। অধিকাংশ পরিবার মৌখিক চুক্তি কিংবা নন-রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগ করে নেয়, যা পরে আইনি বিরোধ ও প্রতারণার দ্বার খুলে দেয়। এই অস্পষ্টতা নিরসন করতেই সরকার এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।

নতুন নিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে, জমি বা সম্পত্তি বণ্টন, বিক্রয় কিংবা হস্তান্তরের পূর্বশর্ত হিসেবে রেজিস্ট্রার অফিসে নথিভুক্ত দলিল বাধ্যতামূলক। মৌখিক বণ্টন বা অরেজিস্ট্রিকৃত চুক্তি এখন থেকে আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। এমনকি কেউ দলিল ছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চাইলে, তাকে “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন” অনুযায়ী মামলার সম্মুখীন হতে হবে এবং জমি পুনরুদ্ধারেরও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে আইনি স্বচ্ছতা তৈরি হবে। অতীতে দেখা গেছে, অনেক সময় নামজারি থাকলেও মূল দলিল না থাকায় অনেক মানুষ আইনি জটিলতায় পড়েছেন, এমনকি প্রতারণার শিকারও হয়েছেন। এক্ষেত্রে এই পদক্ষেপের ফলে বণ্টনসংক্রান্ত সকল তথ্য নির্ভরযোগ্য ও বৈধ প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হবে, যা ভবিষ্যতে কোনো প্রকার জাল দলিল বা ভুয়া মালিকানার দাবি ঠেকাতে সহায়ক হবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, নামজারি থাকা মানেই মালিকানা নয়, বরং মূল দলিল এবং আদালত অনুমোদিত রেজিস্ট্রিকৃত বণ্টননামাই মালিকানা নির্ধারণে মুখ্য। এ কারণে যেসব পরিবার এখনও অভিভক্ত সম্পত্তি ভোগ করছে, তাদের এখনই আইনগতভাবে দলিল সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরকারি সূত্রমতে, এই নিয়ম বাস্তবায়নে সারাদেশে ভূমি অফিসগুলোকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে জমি নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়লে দলিল ছাড়া কারো পক্ষ নেয়া হবে না এবং প্রয়োজন হলে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সম্পত্তি দখলমুক্ত করে প্রকৃত অংশীদারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই নতুন আইনের আওতায়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেসব জমি এখনও অভিভক্ত রয়েছে, সেগুলোকে যথাযথভাবে দলিলভুক্ত না করলে ভবিষ্যতে সেই জমি কেনাবেচা, দান বা উত্তরাধিকারীর নামে হস্তান্তর সম্পূর্ণভাবে অবৈধ বলে গণ্য হবে। সুতরাং, উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে কারো অবহেলা বা গাফিলতির সুযোগ আর থাকছে না।

আইনি ভাষায়, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক নির্দেশ নয়, বরং এটি একটি আইনি বাধ্যবাধকতা হিসেবে কার্যকর করা হয়েছে। ফলে অরেজিস্ট্রিকৃত সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে এখন থেকে যে কেউ চ্যালেঞ্জ তুললে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এর মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন বিরোধ নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, অন্যদিকে জমির উপর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতাও বাড়বে।

ভবিষ্যতে উত্তরাধিকার সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিবারভিত্তিক সম্পদ রক্ষা করার লক্ষ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এখন অপেক্ষা শুধু এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আইনটির সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া