সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের মোড়ে: পরমাণু ছায়া, কৌশলগত বিপদ ও ভেতরের অন্তর্ঘাত

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
  • ৩০ বার

প্রকাশ: ১৪ই জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধের গন্ধ, ভূমিতে কৌশলের চাপ, এবং ইরানের চারদিকে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও সামরিক অবরোধের এই সময়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে—ইরান কি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রটি ব্যবহার করতে পারবে, নাকি এটি শুধুই একটি নিরুত্তাপ প্রত্যাশা হয়ে থাকবে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনার ঢেউ, যা পরে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণেও জায়গা করে নেয়, আজ একটি গভীর ও জটিল প্রশ্ন সামনে এনেছে: ইরান কি সত্যিই পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে? আর যদি পৌঁছেই থাকে, তাহলে এখনই কি তার তা ব্যবহারযোগ্য সক্ষমতা প্রমাণের সেরা মুহূর্ত?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা রাখে এবং এটি এখন কার্যকরভাবে প্রদর্শন করতে পারে, তাহলে বর্তমান যুদ্ধে পুরো চিত্র বদলে যেতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু ইসরাইল নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকেও চাপে ফেলা সম্ভব হতে পারে। এমনকি তা ইরানকে কূটনৈতিকভাবে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি ইরান এই সুযোগে তা ব্যবহার না করে কিংবা কোনো উপায়ে তা প্রকাশে বিলম্ব করে, তাহলে ভবিষ্যতে আর এই সুযোগ ফিরে নাও আসতে পারে।

সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান সাময়িকভাবে তার শক্তি প্রদর্শন করলেও, ইসরাইল যে গভীরভাবে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা চালিয়েছে, তা এই পুরো যুদ্ধকে ভিন্ন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে। ইরানের ফার্স্ট-লাইন ডিফেন্স ভেদ করে কার্যত কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এটা কেবল একটি কৌশলগত ব্যর্থতা নয়, বরং ইরানের ভেতরে শক্ত অবস্থানে থাকা অন্তর্ঘাতকারীদের সক্রিয় উপস্থিতির প্রমাণ। তাদের খুঁজে বের করা এখন ইরানের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে রূপ নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই অন্তর্ঘাতকারীদের সনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি আগামি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও অনিশ্চিত থাকবে।

এই যুদ্ধ ইরানের জন্য শুধুমাত্র সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের দিক থেকেও একটি জীবন্ত বিভাজন রেখা তৈরি করেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যদি ইরান এই যুদ্ধে হেরে যায়, তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের মতো পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে। কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও জাপানের মতো—যাদের জাতীয় ভূখণ্ড, রাজনীতি ও অর্থনীতি পশ্চিমা ক্ষমতাগুলোর শর্তে পুনর্গঠিত হয়—সেই পরিণতি ইরানকেও গ্রাস করতে পারে।

আরেকটি আশঙ্কা উঠে এসেছে, ইরানের ভূখণ্ডগত কাঠামো নিয়েও যদি পশ্চিমা শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে দেশটির রেয়ার মিনারেলস বা দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। উল্লেখযোগ্য যে, ইরান বিশ্বের অন্যতম রেয়ার মিনারেলস সমৃদ্ধ দেশ। এটি হারালে দেশটির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থনৈতিকভাবে নতুন এক দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে পড়বে এবং ঐ অঞ্চলে চিরস্থায়ী প্রভাব হারাবে।

যুদ্ধের আরেকটি গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় এসেছে ইরানের অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন, ইরান যদি হেরে যায়, তাহলে বর্তমান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়ে এক পূর্ব-শাহী বা রাজতান্ত্রিক শাসনে ফিরে যেতে পারে। তবে এই ধারণার সঙ্গে অনেক বিশ্লেষক একমত নন। তারা যুক্তি দেন, পশ্চিমারা ও ইসরাইল চাইবেই যে, শিয়া-সুন্নি বিভাজন টিকে থাকুক—কারণ মুসলিম বিশ্বের একক নেতৃত্ব সুন্নিদের হাতে গেলে সেই ঐক্য পশ্চিমা রাজনীতির জন্য হুমকি হতে পারে। এ কারণে, শিয়া খেলাফতের পতন নয়, বরং তার একটি দুর্বল ও নিয়ন্ত্রিত সংস্করণ টিকিয়ে রাখাই হতে পারে তাদের লক্ষ্য।

এই উত্তপ্ত বাস্তবতায় উঠে এসেছে ইরানের একটি মারাত্মক কৌশলগত ভুল—চাবাহার বন্দর ভারতের হাতে তুলে দেওয়া। ইরান এই বন্দর ও তার আনুষঙ্গিক নিরাপত্তা কাঠামো ভারতীয়দের দখলে দিলেও তাদের পর্যবেক্ষণ বা নজরদারির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে ভারতের ভূমিকা নিয়ে এখন ইরানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাঝে সন্দেহ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পুরো পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যকে কাঁপিয়ে তোলার পাশাপাশি, গোটা বিশ্বের সামরিক ও কূটনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বড় শক্তিগুলো একদিকে যেমন তাদের নিজের স্বার্থ নিশ্চিত করতে চাইছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াইও তীব্র হয়ে উঠেছে। পরমাণু শক্তির সম্ভাব্য হুমকি, অন্তর্ঘাতমূলক হামলার সফলতা, এবং কৌশলগত বন্দর রাজনীতির জটিলতা—সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ কোনো সাধারণ দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি একটি নতুন শীতল যুদ্ধের দিগন্ত নির্দেশ করছে।

প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—এই নতুন বাস্তবতায়, ইরান তার জাতীয় অস্তিত্ব, গৌরব ও ভবিষ্যৎ ধরে রাখতে পারবে কিনা? এবং যদি পারেও, সেটা কি কোনো গর্বময় বিজয় হবে, নাকি নিয়ন্ত্রিত শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণ? সময়ই এই উত্তরের নিয়ামক। তবে ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যে জাতি কৌশলে ভুল করে, শক্তি থাকা সত্ত্বেও একাকী দাঁড়ায়, এবং মিত্রদের সমর্থন নিশ্চিত না করেই যুদ্ধ ঘোষণা করে—তার পরিণতি প্রায়শই নির্মম হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া