সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

শত্রুকে ধাওয়া করে শত্রুর ঘরে আগুন: হাইফায় ইরানি হামলা ইসরায়েলকে শেখালো যুদ্ধের নতুন পাঠ

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
  • ৪৯ বার

প্রকাশ: ১৫ই জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

সাম্প্রতিক এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো বিশ্ব আবারও চমকে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের বিস্তার দেখে। ভিডিওতে দেখা যায়, ইরানের উৎক্ষেপণ করা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র “ফাত্তাহ‑১” সরাসরি আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের অন্যতম কৌশলগত তেল বন্দর হাইফায়। দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মুহূর্তেই বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘন ধোঁয়ার কুন্ডলী ও আগুনের শিখায় বন্দরের একাংশকে পরিণত করেছে এক ধ্বংসস্তূপে।

এই হামলার তাৎক্ষণিক প্রভাব কেবল ইসরায়েলের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এতে ভারতের আদানি গ্রুপ পরিচালিত ওই বন্দর অবকাঠামোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়—যা ভারতীয় বাণিজ্য কূটনীতির জন্য এক বড় ধাক্কা। এই বন্দরের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে একটি কার্যকর রুট তৈরি হচ্ছিল, যেখানে ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা বহুদিন ধরে বিনিয়োগ করে আসছিলেন।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এই হামলা একটি সামরিক প্রতিক্রিয়া হলেও, বাস্তবে এটি একটি বহুমাত্রিক কৌশলগত বার্তা। ইসরায়েল বছরের পর বছর ধরে ইরানের ভেতরে অভিযান চালিয়েছে—পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যাকাণ্ড, গোপন ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, সাইবার হামলা সবকিছুই ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পরিচালিত বলে আন্তর্জাতিক মহলে widely believed। সেই দীর্ঘদিনের আক্রমণের পাল্টা হিসেবেই এবার ইরান স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিল—‘ধাওয়া করতে করতে শত্রুকে তার নিজ গৃহে কাবু করা যায়’।

ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ‑১ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি শব্দের চেয়ে অনেকগুণ দ্রুত চলতে পারে এবং সনাতনী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একে ঠেকাতে প্রায় অক্ষম। ফলে এই হামলা শুধু ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার গাফিলতিই তুলে ধরেনি, বরং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর এক বড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

হাইফা বন্দর ইসরায়েলের বাণিজ্য প্রবাহের প্রাণকেন্দ্র হলেও, এটি শুধুই একটি ‘ইসরায়েলি স্থাপনা’ ছিল না। এটি ভারতীয় বহুজাতিক আদানি গ্রুপ পরিচালিত এবং ভারত সরকারের সক্রিয় সমর্থনে উন্নত একটি বন্দরের প্রতীক। ফলে হামলার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা ইরান পাঠিয়েছে ভারতের প্রতিও—‘শত্রুর বন্ধুত্বে বিনিয়োগ মানেই শত্রুর সঙ্গে ভাগাভাগি করা বিপদ।’

ভারতের বিদেশ নীতিতে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা অনেক পুরনো এবং রাজনৈতিকভাবে তা অনেক সময় আত্মঘোষিত কৌশলগত মিত্রতার পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু এই মিত্রতা কতটা ব্যয়বহুল হতে পারে, হাইফা বন্দরের ক্ষতিই তার প্রথম নমুনা।

এই হামলা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধ কেবল সামরিক নয়—এটি অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গভীরে প্রবেশ করে। একে শুধু একটি বন্দর হামলা হিসেবে দেখা ভুল হবে। এটি ইসরায়েলের আস্থায়, ভারতের কৌশলে, পশ্চিমাদের প্রভাব বলয়ে এবং ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে একটি কৌশলগত ধাক্কা।

বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া উপগ্রহচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ নিশ্চিত করে যে, হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বাস্তবায়িত। ইরানের এই সক্ষমতা প্রমাণ করে দেয় যে, আধুনিক প্রযুক্তি, কৌশলগত ধৈর্য এবং মনস্তাত্ত্বিক বার্তা—সব মিলিয়েই আজকের যুদ্ধের আসল রূপ।

ইসরায়েল বছরের পর বছর ধরে যে আগ্রাসী কৌশল ব্যবহার করেছে, তা আপাতদৃষ্টিতে সফল মনে হলেও, প্রতিপক্ষকে বারবার ছোট করে দেখার মূল্য আজ তাদের দিতে হচ্ছে। ফাত্তাহ‑১ এর আঘাত যেন এক প্রতীকী উত্তর—“কেবল শত্রুকে ধাওয়া করলে শেষ গন্তব্য নিজের ঘরও হতে পারে।”

এখন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই আগুনের ছাই থেকে কী উঠে আসবে? প্রতিশোধের আরও ভয়ানক রূপ? না কি কূটনৈতিক সমঝোতার পথ?

বিশ্ব রাজনীতি যেদিকেই যাক, এটুকু নিশ্চিত—এই হামলা একটি নিরব সংকেত, যা গোটা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে, আধিপত্য নয়, ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্কই পারে টেকসই শান্তির পথ দেখাতে।

হাইফার আগুন শুধু এক বন্দর পুড়ায়নি, পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু অহংকার, কিছু একতরফা সিদ্ধান্ত, এবং অনেক প্রশ্নের নিরুত্তর প্রান্ত। এখন সময় সেই ছাইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন করে ভাবার—এই যুদ্ধ কাদের জন্য, আর কাদের ক্ষতির জন্য?

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া