প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
চীনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যে সব বৃত্তি দিয়ে থাকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ’। এ বৃত্তির মূল উদ্দেশ্য হলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনের শিক্ষাব্যবস্থায় আকৃষ্ট করা এবং গবেষণামুখী শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য জিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই বৃত্তির আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যেখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
এই স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সুযোগ পাচ্ছেন। স্নাতক পর্যায়ে ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষে ১০ হাজার চায়নিজ ইউয়ান প্রদান করা হবে। বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নকালীন সময় নানা ধরনের একাডেমিক সুবিধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা, আবাসন এবং গবেষণার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বৃত্তির জন্য যেসব শিক্ষার্থী আবেদন করতে ইচ্ছুক, তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। স্নাতক পর্যায়ের আবেদনকারীর বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের মধ্যে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীর বয়স ৩০ বছরের কম এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ধরা হয়েছে ৪০ বছর। এই বয়সসীমার মধ্যে থেকে যারা নির্ধারিত বিষয়ে আগ্রহী, তারাই কেবল আবেদন করতে পারবেন।
এই বৃত্তির আওতায় যেসব বিষয়ে অধ্যয়ন করা যাবে, তার মধ্যে রয়েছে—ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি, বিমা, হিসাবরক্ষণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান, বাণিজ্য, ব্যবসা প্রশাসন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিপণন, অটোমেশন এবং বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন শাখা। এসব বিষয়ের পাঠ্যক্রম ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত হবে, ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভাষাগত সুবিধাও থাকবে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে বৈধ পাসপোর্টের কপি, সর্বশেষ অর্জিত ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদপত্র, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ, পারিবারিক আর্থিক বিবরণী, গবেষণার প্রস্তাবনা (স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির ক্ষেত্রে) এবং দুটি সুপারিশপত্র। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আইইএলটিএস, টোফেল কিংবা সমমানের অন্য যেকোনো সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনের উচ্চশিক্ষা বৃত্তি নিয়ে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বমানের শিক্ষা, প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান, আধুনিক গবেষণাগার, বৈশ্বিক মানসম্পন্ন ডিগ্রি এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। চীন সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজস্ব তহবিল থেকে বৃত্তির সুযোগ দিয়ে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যয় বহনে বড় সহায়ক হয়।
জিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ প্রোগ্রামও এই ধারা অনুসরণ করে উচ্চশিক্ষার জন্য অনুকূল একটি পরিবেশ তৈরির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং পরবর্তীতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়েছেন।
এই স্কলারশিপ প্রোগ্রাম শুধু আর্থিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি শিক্ষার্থীদের এক বৈচিত্র্যময়, আন্তসাংস্কৃতিক শিক্ষাজগতে প্রবেশাধিকার দেয়। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন চীনের উন্নত শিক্ষা ও গবেষণার সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন, অন্যদিকে তেমনি চীনের সমাজ, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের পেশাগত দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি বাড়াতে পারেন।
সার্বিকভাবে বলা যায়, জিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। যারা আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রি অর্জন করতে চায় এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রস্তুত, তাদের জন্য এই বৃত্তি বিশেষভাবে কার্যকরী হতে পারে। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে আবেদন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া উচিত।