প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও, ক্রীড়াঙ্গনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে কিছুটা হলেও গতি আসছে। এমন এক সময়ে যখন দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা বন্ধ, দূতাবাস কার্যত নিষ্ক্রিয় এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান প্রায় স্থবির—তখন ভারতের সরকার নিজেদের কৌশলগত বাধ্যবাধকতার কারণেই পাকিস্তানের হকি দলকে ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যৌথ অভ্যন্তরীণ বৈঠকের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া হয়েছে। কারণ, খেলাধুলার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো—বিশেষত আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)—একাধিকবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে, কোনো দেশের দলকে রাজনৈতিক কারণে অংশগ্রহণে বাধা দিলে আয়োজক দেশকে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের জন্য ঝুঁকির বিষয় ছিল হকি এশিয়া কাপ ও জুনিয়র হকি বিশ্বকাপের আয়োজন ক্ষমতা হারানো, যা ভবিষ্যতের কমনওয়েলথ গেমস কিংবা অলিম্পিক আয়োজনের পথ রুদ্ধ করতে পারত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ভারতের হকি ফেডারেশন ইতোমধ্যে পাকিস্তান হকি ফেডারেশনকে জানিয়েছে, তাদের সিনিয়র ও জুনিয়র হকি দলের ভিসার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এখন চলছে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। পাকিস্তানের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের জন্য ভিসা প্রস্তুতির দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে হকি ইন্ডিয়ার একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর।
ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অলিম্পিক চার্টারের মৌলিক আদর্শকে সম্মান জানিয়েই—যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, খেলাধুলাকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে এবং অংশগ্রহণকারীদের জাতীয়তার ভিত্তিতে বাদ দেওয়া যাবে না।
এ সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তান অংশ নিতে পারবে আসন্ন হকি এশিয়া কাপে, যা আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের বিহারের ঐতিহাসিক শহর রাজগিরে অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে, ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য জুনিয়র হকি বিশ্বকাপেও অংশ নেবে পাকিস্তান, আয়োজক শহর হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে তামিলনাড়ুর মাদুরাই।
উল্লেখ্য, খেলাধুলা বরাবরই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও, বাস্তবে রাজনৈতিক অবস্থা সেই পথ সহজ করে না। ২০১৯ সালের পর থেকে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক ক্রীড়া সম্পর্ক কার্যত স্থগিত। এমনকি ক্রিকেটেও তারা কেবলমাত্র আইসিসি ও এসিসির টুর্নামেন্টেই একে অপরের মুখোমুখি হয়।
এতদসত্ত্বেও, হকির মতো ঐতিহ্যবাহী খেলায় এমন এক সমঝোতা যে আন্তর্জাতিক নিয়ম ও নীতির শৃঙ্খল মেনেই সম্ভব, তারই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারত। একইসঙ্গে এটি ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলানোর সম্ভাবনাও উন্মোচন করে দিল।
যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পাকিস্তান হকি দলকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা আসেনি, তবে সংশ্লিষ্ট মহলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে পাওয়া ইঙ্গিত বলছে, অচিরেই ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান হকি ফেডারেশনও ভিসা ও ভ্রমণসংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, দীর্ঘদিন পর ভারতীয় মাটিতে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যাবে হকি ম্যাচে, যা শুধু খেলার মাঠেই নয়, কূটনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।